বিস্ফোরণের শব্দে অস্বস্তিতে সীমান্তবাসী, কাটছে না উদ্বেগ

* অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাড়ছে উদ্বেগ : নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধের কারণে কোনোভাবেই স্বস্তি মিলছে না বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী বসবাসকারি মানুষের মনে। একই সঙ্গে কাটছে না উদ্বেগও। কখন মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাবে, কখন সীমান্তের এপার থেকে নিজ বসতঘরে এসে পড়ে গুলি বা মর্টারশেল তার কোনো কিছুই জানেন না এসব মানুষ। তার সাথে রয়েছে সীমান্ত অতিক্রম করে ওপার থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের রাষ্ট্রিয় সদস্য বা অস্ত্রধারী রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ। একই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও।

টানা ১৫ দিনের অস্বস্তিও উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল আহমদ। তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন স্বস্তি নেই এলাকাবাসীর মনে। গত সোমবার দিনব্যাপী হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের নাফনদীর ওপারে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনা গেলেও গতকাল তা বদলে গেছে। গতকাল ভোর ৪টার থেকে এ পর্যন্ত (বেলা ১১টা) সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দের বিস্ফোরণ বলে দিচ্ছে ওখানে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বা যুদ্ধ চলছে। নানা মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে মিয়ানমারের চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী এলাকায় বিজিপির ঘাঁটি ঘিরে এই যুদ্ধ।

ওখানে যুদ্ধতে সীমান্তবাসীর কোনো ভয় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মূলত উদ্বেগ বা ভয়ের কারণ হচ্ছে এপারে কখন গুলি এসে পড়ে, কখন মর্টারশেল এসে পড়ে তার তো কোনো হিসেব নেই। এতে এখানেও হতাহতের আশঙ্কা রয়ে যায়। ফলে সীমান্ত এলাকার মানুষকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান তিনি। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানান, নাফনদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ সোমবারের তুলনায় গতকাল ভোর থেকে বেড়ে গেছে। এতে এপারে গুলি-মর্টারশেল এসে পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ অন্যদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তবে সীমান্তে কোস্ট গার্ড-বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে। সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম জানিয়েছেন, একই সময়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের মুন্ডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকার তিন ও চার কিলোমিটার নামক এলাকায় ভোররাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত প্রচুর গোলাগুলি হয়েছে। এখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এদিকে, যদিও সোমবার দুপুরে ওপারে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডালী, কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে সোমবার মধ্যরাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কি কারণে এ বিস্ফোরণের শব্দ তা নিশ্চিত করতে পারেননি ওই এলাকার ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের ৩১ নম্বর পিলার থেকে ৫৬ নম্বর পিলারের প্রায় ৯২ কিলোমিটার সীমান্তের ওপারে এই নীরব গুলি বা মর্টারশেলের শব্দ। এখানে স্বস্তি নেই। রয়েছে উদ্বেগ। নতুন করে ওখানে আগুনের কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় ব্যাপকহারে দেখা গিয়েছিল সীমান্তের ওপারে। তখন রোহিঙ্গা এসেছে, এখন বিজিপি, অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আসছে। যা সীমান্তবাসীর ভয়ের কারণ। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় কখনও কালো ধোঁয়া আবার কখনও গুলি বা মর্টারশেলের শব্দ। কখন বন্ধ, কখন শোনা যাচ্ছে তা কেউ নিশ্চিত নন। এখানে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। আর সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নাফনদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারি ১৩৭ জনকে প্রতিহত করেছে বিজিবি।