সংরক্ষিত আসনে দলীয় এমপি প্রত্যাশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা

মনোনয়ন না পেলেও কাজ অব্যাহত রাখুন

আবেদনকারী ১ হাজার ৫৫৩ জনের মধ্য থেকে ৪৮ জন নির্বাচন করা বেশ কঠিন

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থীদের সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নেতৃত্ব দেয়ার আকাঙ্ক্ষা যেন হারিয়ে না যায়, মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করতে হবে।

গতকাল সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাইকে ‘যোগ্য’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আবেদনকারী ১ হাজার ৫৫৩ জনের মধ্য থেকে ৪৮ জন নির্বাচন করা বেশ কঠিন। এ সংখ্যাই প্রমাণ করে, নারী জাগরণ ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নারীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তা ব্যর্থ হতে পারে না। সে আদর্শকে ধরে রাখতেই দেশে ফিরে আসা। কবরের মাটি ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলাম, এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না, তাই করেছি। তবে সে চলার পথ সহজ ছিল না।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চললে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা যায়, সেটি আমরা প্রমাণ করেছি। মেয়েরা সাফল্যের সঙ্গে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করে। পড়াশোনায় নারী আজ এগিয়ে। কর্মক্ষেত্রেও সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। বিভিন্ন পেশায় ভালো করছে। নানা বাধা পেরিয়ে মেয়েরা আজ খেলাধুলার মাঠে আসছে। এখানেও এগিয়েছে তারা। এখন মেয়েরা অনেক পদক আনছে। মেয়েরা খেলতে পারবে না, ব্যবসা করবে না- ইসলাম ধর্মেও এমন বলা নেই। প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন একজন নারী, কোনো পুরুষ নয়। সাহস করে বিবি খাদিজা এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি ব্যবসা করতেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের এই বাংলাদেশ। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে। জেল-জুলুম সব সহ্য করেই ক্ষমতায় এসেছি। জীবনের হুমকি ছিল বারবার। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা, এ দেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। আজ তা অর্জন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, এত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ যে বারবার ক্ষমতায় আসবে, এটা কখনো কেউ ভাবতে পারেনি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা শিশু রাসেলকে (বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে) পর্যন্ত হত্যা করেছিল। তারা চেয়েছিল যেন ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমি বারবার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার দিনের ‘ঝড়ঝাপ্টা’ থাকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, দুই চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল ভাইদের। আমি তো তাদের পাইনি, পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সে কবর ছুঁয়ে শপথ করেছিলাম, স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। আমার এ যাত্রাপথ সহজ ছিল না। নানান রকম ষড়যন্ত্র চলেছিল, এখনো রয়েছে।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের অবস্থা খুব খারাপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত সমাজ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পথচলা। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চললে যেকোনো অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে বসতে পেরেছে।