ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডলার সংকটে চরম বেকায়দায় বেবিচক

থমকে গেছে ছয় প্রকল্প অগ্রগতিতে অসন্তোষ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্ত মন্ত্রণালয়
থমকে গেছে ছয় প্রকল্প অগ্রগতিতে অসন্তোষ

ডলার সংকটে চরম বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এতে সংস্থাটির চলমান গুরুত্বপূর্ণ দশটি প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। ডলার সংকট সমাধানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্মরণাপন্ন হয়েছে বেবিচক। তবে মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান দিতে পারেনি। এতে প্রকল্পগুলোর কাজে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেবিচকের চিঠির আলোকে নড়েচড়ে বসেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে ডলার সংকটের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে কবে নাগাদ ডলার সহায়তা পাবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, চলমান ৬টি প্রকল্পের মধ্যে একটির কাজ এ বছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৫টি কাজ আগামী অর্থবছরে সম্পন্ন হবে। এসব প্রকল্পের কাজের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করতে হয়। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সীমিতকরণের জন্য প্রকল্পসমূহের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিলের বৈদেশিক মুদ্রার অংশ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনে গত বছর থেকে প্রকল্পগুলোর বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। অনাপত্তিপত্র না থাকায় ব্যাংকগুলোও সময়মতো অর্থছাড় করেনি। বিষয়টি সুরাহার জন্য মন্ত্রণালয়ের স্মরণাপন্ন হয়েছে বেবিচক।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে, চলমান প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি ও নিয়োজিত ঠিকাদার/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিলের বৈদেশিক মুদ্রায় চাহিদা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেছেন, বিশ্বজুড়ে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণে ডলার সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি, সংকট সুরাহা হবে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজ যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি ও বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯৯.৯৭ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ৮৮.১৫ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে সম্পন্ন হবে। কিন্তু গত জানুয়ারি পর্যন্ত বিল বকেয়া রয়েছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৫ মার্কিন ডলার। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৭৯.৬২ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬৩.৬৮ শতাংশ। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪ মার্কিন ডলার।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডারসহ সিএনএস প্রকল্প কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬২ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৯৩ লাখ ১৮ হাজার ইউরো। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ।

প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৭৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার। ওসমানী আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) শীর্ষক প্রকল্প কাজের অগ্রগতি বিমানবন্দর ২৫ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ১০ শতাংশ । প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। ২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৮৫ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

চলমান ৬টি প্রকল্পে ২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ৬ কোটি ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৭২৫ মার্কিন ডলার এবং ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ২৮৯ মার্কিন ডলার এবং ৯৩ লাখ ১৮ হাজার ইউরো।

বেবিচকের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ডলার সংকটে চলমান ছয় প্রকল্পের কাজে ধীরগতি তৈরি হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিমানবন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীদের সেবার মান বাড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত