ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৯ মার্চ রওশনপন্থিদের সম্মেলন

জাপায় ফিরছেন বহিষ্কৃতরা

জাপায় ফিরছেন বহিষ্কৃতরা

জাতীয় পার্টি (জাপা) বহিষ্কৃতরা আবার দলে ফিরছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে জাপা থেকে বহিষ্কার করা নেতাকর্মীদের নতুন করে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৯ মার্চ জাপার রওশনপন্থিদের জাতীয় সম্মেলনে তাদের দেখা যাবে বলে জানিয়েছে জাপার একটি অংশ।

সূত্র জানায়, আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থিরা। সম্মেলন নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেন, পবিত্র মাহে রমজানের আগে রাজধানীতে নানা আনুষ্ঠানিকতা থাকে। এছাড়া সম্মেলনের উপযুক্ত স্থান না পাওয়ায় আমরা তারিখ পরিবর্তন করেছি। আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পার্টির সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

জানা যায়, দীর্ঘ নীরবতা শেষে জাতীয় পার্টির বৈঠকে দেখা গেছে সাবেক মন্ত্রী ও দলের কোচেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) কাজী ফিরোজ রশীদকে। গত রোববার রাতে জাপা চেয়ারম্যান (একাংশের) রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে যান কাজী ফিরোজ। হঠাৎ করে রওশন এরশাদের সঙ্গে কাজী ফিরোজের সাক্ষাৎ জাপার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও জাপার চলমান রাজনীতি নিয়ে কাজী ফিরোজ বলেন, রওশন এরশাদ আমাদের অভিভাবক, তিনি গত রোববার সন্ধ্যায় আমাকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। এরপর আমি তার বাসায় যাই। রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেও তার ডাকা জরুরি বৈঠকে সাড়া দেননি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতারা। তবে তাদের ফেরানোর উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্বের মীমাংসার সুযোগ দেখেন কী না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সত্যি বলতে জিএম কাদের এবং উনার আশপাশে যারা আছেন তারা এই সমঝোতা চান কী না, এটাও কিন্তু চিন্তা করতে হবে। দল কোথায় গেল, দলের লাভ কিংবা ক্ষতির কথা তো তারা চিন্তা করেন না। সংসদে যে কয়টা সিট তারা পেয়েছেন এতেই তারা মহাখুশি।

জাপা যদি পুনরায় ব্র্যাকেট বন্দি হয়ে যায়, তাহলে রাজনীতিতে গুরুত্ব হারাবে কী না, জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।

রওশনপন্থিদের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ আপনাকে জাপার সম্মেলনের আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে কাজী ফিরোজ বলেন, এটা সত্য উনি যখন এই ঘোষণা দেন, তখন সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার আগে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। আবার যেহেতু কাজী মামুন এই ঘোষণা দিয়েছেন, তাই আমি সরাসরি বিষয়টি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোটাই করব না। সম্মেলন ৯ মার্চ এখনও সময় আছে, আরেকটু অবজার্ভ করি।

রওশন এরশাদের ডাকা বৈঠকে জাপা থেকে বহিষ্কৃতদের কয়েকজন ও আগে থেকেই রওশন অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতারাই অংশ নেন। সভায় রওশন এরশাদ বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি পার্টির শীর্ষ নেতা এবং অন্যান্য স্তরের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছি। বৈঠকে আমরা জাপার দশম জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ২ মার্চ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু পবিত্র রমজানের আগে রাজধানীতে নানা আনুষ্ঠানিকতা থাকায় এবং ওই দিন সম্মেলনের জন্য উপযুক্ত ভেন্যু না পাওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করে ৯ মার্চ সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এরশাদের রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তায় চরম ধস নেমেছে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, যে দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মী দক্ষতা ও যোগ্যতায় এখনো সরকার পরিচালনার স্বপ্ন দেখেন, সেই দলটির সাংগঠনিক অবস্থা বর্তমানে নাজুক। জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদের নামটাও প্রায় মুছে ফেলা হয়েছে। দলের এই ক্রান্তিলগ্নে এরশাদণ্ডপাগল নেতাকর্মীদের দাবির মুখে এক কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে রক্ষার জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশিদকে মহাসচিব ঘোষণা করেন রওশন। যদিও শুরু থেকেই জিএম কাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা রওশনের সিদ্ধান্তকে আমলে নেননি।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান কাজী ফিরোজসহ অনেক নেতা। এরপর থেকে তাকে জাপার কোনো অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্যে দিয়ে জাপার রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হলেন কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না ঠিক তা নয়। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ মিলে জাপা প্রতিষ্ঠা করেন। এরশাদ সাহেব যখন জেলে বন্দি থাকতেন তখন ম্যাডাম আমাদের দেখে রাখতেন। রাজনীতিতে জাপার যে দীর্ঘ অর্জন, সেখানে রওশন এরশাদের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। উনি যখন থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখনও কিন্তু আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। উনি আমাকে যতবার ডেকেছেন, আমি কখনো না বলিনি। এটা সেরকমই একটা সাক্ষাৎ।

এদিকে কাজী ফিরোজের বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তিনি (ফিরোজ রশীদ) কোন দল করবেন না-করবেন, সেটা একান্তই তার ব্যাপার। নানান মার্কা নিয়ে জাতীয় পার্টি নামের অনেক দল থাকলেও মূল জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে, যেখানে কোনো ভাঙন নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত