ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

বাস্তবায়নে দুর্ভোগ কমবে শতভাগ নিরসন সম্ভব নয়

বাস্তবায়নে দুর্ভোগ কমবে শতভাগ নিরসন সম্ভব নয়

চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে বড় বড় খাল নির্মাণ কাজ শেষের পথে। এতে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে এখনো বর্ষা মৌসুমে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা কাটেনি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবয়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। এতে কারো কোনো দায় কিংবা হাত নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দুর্ভোগ কমবে মাত্র। শতভাগ জলাবদ্ধতা নিরসন কোনোভাইে সম্ভব নয়। এদিকে প্রকল্প কাজ শেষ না হতেই সরে যাচ্ছে রিটেইনিং ওয়াল। নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন ১৪ নম্বর গ্যারেজ এলাকায় খালের দুইপাশে নির্মিত রিটেইনিং ওয়ালের একটি অংশ ধীরে ধীরে সরছে। এতে খালপাড়ে নির্মিত ফুটপাতের বড় অংশ দেবে গেছে। পথচারীরা বেশ শঙ্কার মধ্যে চলাচল করছেন এই অংশ দিয়ে। প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ না হতেই ওয়াল সরে যাওয়ার ঘটনায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। পুরো প্রকল্পের রিটেইনিং ওয়ালের কাঠামো কতদিন টিকবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের জুনেই শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্প কাজ। কিন্তু দফায় দফায় ব্যয় ও সময় বাড়ানোর কারণে এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে ২০২৩ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ হলেও শেষ হয়নি। কারণ এ সময় কাজ শেষ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। এরপর আরেক দফা সময় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল সংস্কার, ড্রেনেজ নির্মাণ, গার্ডার ব্রিজ, কালভার্ট এবং বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার তৈরি করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ৩৪তম ইঞ্জনিয়ারিং ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প কাজ শুরুর আগেই নানা অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ ছিল প্রকল্পটি ভুল নকশা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই হাতে নেয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পের ভবিষ্যতে স্থায়িত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্প কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জন কর্মকর্তা বর্তমান প্রকল্প ব্যয় কত এবং কাজ কবে নাগাদ শেষ হচ্ছে এ প্রশ্নে বলেন, সর্বশেষ বর্ধিত ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। আর প্রকল্প কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের বর্ধিত যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার পুরোটা হয়তো লাগবে না। অনেক অর্থ সাশ্রয় হতে পারে।

রিটেইনিং ওয়াল সরে যাওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা প্রকল্প কাজের বিষয় দেখাশোনা করি। কিন্তু তদারকি বলতে যা বোঝায় সেরকম না। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক আসলে ভালো বলতে পারবেন। কারণ তারাই ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন।

সিডিএ সূত্র জানায়, কাজের মাঝামাঝিতে ব্যয় নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ১০ হাজার ৪২০ কোটি টাকার সংশোধিত প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয় (ডিপিপি) উপস্থাপন করে সিডিএ। ব্যয়ের যৌক্তিকতা নির্ণয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি তা কমিয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। দ্বিতীয় দফায় কাটছাঁট করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট ব্যয় কমিয়ে ৮ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর আরো কিছু কাটছাঁট করে প্রকল্প ব্যয় এখন ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয়ের অর্ধেক সিডিএকে নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর খালের সংখ্যা ৫৭টি হলেও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয় ৩৬টি খাল। ৩৬টি খালের পাড়ে প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ভবন ও রাস্তা রক্ষার বিষয়ে মূল নকশায় কোনো পরিকল্পনা ছিল না সিডিএর। ১৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণ বাড়িয়ে ৯০ কিলোমিটার করা হয়। কাদা অপসারণের পরিমাণও বাড়ানো হয়। টাইডাল রেগুলেটর, সিল্ট ট্র্যাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নকশাও পরিবর্তন করা হয়।

নকশায় ত্রুটি এবং তড়িঘড়ি করে প্রকল্প কাজ করার কারণেই রিটেইনিং ওয়াল সরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন, এটা নিসন্দেহে নির্মাণগত ত্রুটি। এ ধরনের ত্রুটি ভবিষ্যতে বড় কোনো বিপদের কারণ হতে পারে। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এত বড় প্রকল্প হাত দেয়া হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে প্রকল্পের সাথে যারা যুক্ত আছেন তাদের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত