ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রামীণ টেলিকম ভবন ‘জবরদখল’

ফের আলোচনায় ড. ইউনূস

ফের আলোচনায় ড. ইউনূস

ফের আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত কয়েকদিনে তার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত গ্রামীণ টেলিকম ভবনটি ‘জবরদখল’ করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভবনটির আটটি অফিস দখল করে নিয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার গ্রামীণ টেলিকম ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। ড. ইউনুস বলেন, হঠাৎ কী হলো, বাইরের কিছু লোক এসে তা জবরদখল করছে। আমরা কোথায় যাবো, কী করবো? পুলিশের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন এই নোবেল বিজয়ী। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু তারা ঘুরে গিয়ে কোনও অসুবিধা দেখছেন না বলে জানান! জবরদখলের পর আমরা নিজের বাড়িতে ঢুকতে গেলে, তারা আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করছে। নিজের অফিসে ঢুকতে পারবো কি না, এটা এখন বাইরের লোকের এখতিয়ার হয়ে গেছে।’ জানা গেছে, ভবনটিতে ১৬টি কোম্পানির কার্যালয় আছে, যার প্রতিটিরই চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। ‘ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ ভবনটা আমরা করেছি, এটা আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। হঠাৎ চার দিন আগে বাইরের লোক এসে জবরদখল শুরু করে। আর আমরাই বাইরের লোক হয়ে গেলাম। আমাদের সব অফিসের প্রধান কার্যালয় এটি। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এখান থেকে কাজ করা হয়।

গ্রামীণ কল্যাণের কর্মীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে কিছু লোক। তারা প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কাউকে, এমনকি ভবন পরিদর্শনে আসা কাউকেও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এর আগে গত কয়েক দিন, ২০ জনের একটি দল এই ভবন দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়। এদিকে গত বুধবার মোবাইলে কল করে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে বেশ কয়েকজন ধমক ও গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ করেন গ্রামীণ কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় (হিসাব ও অর্থ) প্রধান মো. ইউসুফ রেজা খান। পরে সন্ধ্যায় এ বিষয়ে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে গেলে স্থানীয় শাহ আলী থানা সেটি গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

আর এই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ড. ইউনূসকে নিয়ে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। একইসঙ্গে ড. ইউনূসকে বছরের পর বছর ধরে জাতিসংঘের একজন মূল্যবান অংশীদার বলেও আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসব মন্তব্য করেন।

ওই ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের লোকেরা তার সমস্ত গ্রামীণ অফিস দখল করেছে এবং আপনি জানেন, সরকার তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগও দায়ের করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব কি তার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন? জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব ভালো করেই অবগত আছি। আমি আবারও বলতে চাই, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বছরের পর বছর ধরে জাতিসংঘের একজন মূল্যবান অংশীদার। তিনি আরও বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের একজন সহযোগী এবং তিনি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং সাধারণভাবে আমাদের উন্নয়ন কাজকে ঘিরে বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ড. ইউনূসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ থেকে যেসব খবর আমরা আসতে দেখছি, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

এদিকে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৬৮টি মামলা বিচারাধীন। এরমধ্যে ফৌজদারি আদালতে একটি, দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি এবং বাকি ১৬৬টি মামলা ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন। তবে শ্রমিকদের দাবিকৃত পাওনা এরইমধ্যে পরিশোধ করায় বর্তমানে ১০৬টি মামলাই নিষ্পত্তির পথে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

ড. ইউনূসসহ অন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম সংশ্লিষ্ট মামলা ৬৪টি। এছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের ৬৯টি, গ্রামীণ কমিউনিকেশনের ২৫টি ও গ্রামীণ ফিশারিজের নামে ৮টি।

জানা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের কর্মচারীরা (বর্তমান ও সাবেক) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে এসব মামলা করেন। এসব মামলায় শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের দাবি করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বছর শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের পর বর্তমানে ১৬৮টি মামলার মধ্যে ১০৬টি মামলা নিষ্পত্তির পথে রয়েছে।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ড. ইউনূসকে হয়রানির অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়। একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবু এইটুকু বলছি, এই মামলা হয়রানিমূলক নয়। যাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, তারা আদালতে প্রতিকার চেয়েছে। এটা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার। সংবিধানে এই অধিকার তাদের দেওয়া আছে। তিনি (ড. ইউনূস) অপরাধ করেছেন কী করেননি, সেটা আদালত বিচার করবেন।’

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত