কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট শব্দের বিস্ফোরণ শোনা গেলেও দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল বিস্ফোরণের শব্দ। তবে এর মধ্যে গতকাল বিকাল ৫টায় একটি নৌকাযোগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাদের নাফ নদীতেই আটকে রেখেছেন বিজিবি সদস্যরা।
শাহপরীর দ্বীপের নাফনদী-সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই নৌকায় যে পাঁচজন রয়েছে তাদের একজন নারী, অপর চারজন পুরুষ। যেখানে নারীটি গুলিবিদ্ধ। বিজিবি সদস্যরা নৌকাটি ঘীরে অবস্থান নিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ৭ টা) ৫ রোহিঙ্গা নাফ নদীতে ভাসমান নৌকায় অবস্থান করছেন। বিজিবি সদস্যরা তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন জানিয়েছেন, বিকালে একটি নৌকা শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে পৌঁছে পাঁচজন। এদের মধ্যে একজন নারী গুলিবিদ্ধ রয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তারা নাকি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এসেছেন।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে মাছ ধরতে যাওয়া স্থানীয় যুবক রুবেল বলেন, আমরা জেটিতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলাম। এমন সময় একটি নৌকা জেটিতে পৌঁছে। নৌকায় একজন লোককে শুয়ে রাখা হয়েছে। শুনেছি তিনি গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারী। পরে বিজিবি সেখানে পৌঁছে নৌকাটি ঘিরে রাখে। নৌকায় গুলিবিদ্ধ নারীর হাতে স্যালাইন লাগানো রয়েছে।
তবে জেটিঘাটে থাকা স্থানীয় লোকজন জানান, পাঁচজন রোহিঙ্গা নাগরিক শাহ পরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসেছেন। এ পাঁচজন রোহিঙ্গা নাগরিক। তার মধ্যে স্বামী স্ত্রী দুজন। আর তিনজন নৌকার মাঝিমাল্লা বলে দাবি করছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে একটি নৌকায় পাঁচজন রোহিঙ্গা এসেছেন বলে শুনেছি। এর মধ্যে একজন নাকি নারী গুলিবিদ্ধ রয়েছেন তবে বিজিবি তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা না গেলেও গতকাল শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে বদলে গেছে তা। সকাল ৮ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টানা ২ ঘণ্টা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে সীমান্তের এপারও। এরপর থেকে কিছুক্ষণ পর পর থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে দুপুর পর্যন্ত। সর্বশেষ দুপুর ১টায় বিকট দুটি শব্দ শোনা গেছে। এরপর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে আসছে এমন বিস্ফোরণের শব্দ। শাহপরীর দ্বীপের একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপ করে এমন বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম জানান, নাফনদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। যেসব স্থান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে, সেখানে রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নল বন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকা অবস্থিত। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ওই চৌকি ঘিরেই চলছে এই সংঘর্ষ। তিনি বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের প্রচুর গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়। তবে রাতভর কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি। শনিবার সকাল থেকে কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দে মাটি কেঁপে ওঠে। সেই সঙ্গে গোলাগুলির শব্দ কানে ভেসে আসে। দুপুরের পর শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা নবী হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে মিয়ানমার সীমান্ত শান্ত ছিল। কিন্তু শনিবার সকালে বিকট শব্দে এ পারের মাটি কেঁপে উঠে। এতে তারা ভীত হয়ে পড়েন।
বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিকট শব্দ ও গোলাগুলি খবর পেয়েছেন। সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক স্পিড বোট যোগে টহল দেয়া হচ্ছে। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ঢুকতে দেয়া হবে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এটি মিয়ানমারের সমস্যা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
