ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে কারা!

পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে কারা!

পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ শেষ হয়। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে তিন দিন লেগে যায়। এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এককভাবে সরকার গঠনে কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোট গঠনেও জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। কোনো দলই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছে না। এরই মধ্যে গতকাল ভোট জালিয়াতি স্বীকার করে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার পদত্যাগ করেছে। ফলে পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ওই শহরে ভোট জালিয়াতির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি করে পদত্যাগ করলেন। একই সঙ্গে তিনি নিজের ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য জড়িত কর্মকর্তার বিচার চাইলেন। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলি দাবি করেন, পিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ৫০ হাজার ভোটে ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকে ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী করেছি।’

লিয়াকত বলেন, ‘আমি রওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে অবিচার করেছি। আমি আজ ফজরের নামাজের পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। তবে পরে আমি চিন্তা করলাম, আমি কেন মহাপাপের মৃত্যুকে বরণ করে নেব? কেন আমি সব কিছু মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেব না? রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে আমি ভোট জালিয়াতির দায়দায়িত্ব মেনে নিচ্ছি। আমার নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করছি। এই শহরে অনেক উন?য়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তবে ‘দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে’ নিজের ভাবমূর্তিকে এভাবে কলঙ্কিত করায় তিনি অনুতপ্ত। এই কাজ করার পর আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। এখন আমি শান্তিপূর্ণভাবে মরতে চাই। আমি যা করেছি, সেজন্য আমার শাস্তি হোক। আমার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসিপির জড়িত কর্মকর্তার শাস্তি হওয়া উচিত।’

অন্যদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন, যদি তার দল আরেকবার ক্ষমতায় আসে; তাহলে তিনি কোনো ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ নেবেন না। এর বদলে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে পাকিস্তানের উন?তির জন্য কাজ করবেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে যান পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা আলী মুহাম্মদ খান। ওই সময় তাকে এ কথা জানান ইমরান খান। আলী মুহাম্মদ খান আরো জানিয়েছেন, ইমরান খান তাকে বলেছেন, পাকিস্তানকে এগিয়ে নিতে হলে একটি ন্যায় ও সমন্বয়সাধন কমিটি গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেছেন আলী মুহাম্মদ খান। তিনি ইমরান খানের বক্তব্য উদ্ধুত করে লিখেছেন- ক্ষমতায় আসার পর, আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেব না। আমরা দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নেব, দেশ এবং জাতির উন?য়নের জন্য। ইমরান খান কারাগার থেকে আরো বলেছেন, আমাদের ন্যায় ও ক্ষমাশীলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। তেহরিক-ই-ইনসাফ, ক্ষমতায় আসার পর, পাকিস্তানকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন?য়নের দিকে নিয়ে যাবে। কোনো প্রতিশোধ নয়।

জিও নিউজ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অনিশ্চয়তা চলার পর এ ইস্যুতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে যখন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেই সময়ে এসে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ নেতারা। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশের ভাষ্য, পাকিস্তান এখন সার্বিকভাবে খুবই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে এবং এখন সরকার গঠনের মানে হলো ‘স্বেচ্ছায় মাথায় কাঁটার মুকুট’ পরা। পিএমএল-এনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা খাজা সাদ রফিক দলের এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শুক্রবার খাজা সাদ রফিক বলেন, পিটিআই যেহেতু সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, তাই তাদেরই উচিত পিপিপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করা। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেয়ার মানে হলো নিজের মুকুটকে কাঁটা দিয়ে সজ্জিত করা এবং আমরা মনে করি, পিএমএল-এনের এমন কোনো ইচ্ছে নেই।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি)-এর চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি একটি বেসরকারি নিউজ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) সমালোচনা করে সাক্ষাৎকারে পিপিপি প্রধান বলেছিলেন, দলটির নীতি দেশটির অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পিএমএলএন’র সঙ্গে পিপিপি জোট সরকার গঠন করবে, এমনটি আপনাকে কে বলেছে? আমি আগেও বলেছি: আমাকে প্রথমবার বোকা বানিয়েছেন, এ লজ্জা আপনার, দ্বিতীয়বার বোকা বানিয়েছেন, এ লজ্জা আমার।

নির্বাচনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ৯৩ আসনে জয়ী হয়েছে। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমনপীড়নের মধ্যেও দলটি সমর্থিত প্রার্থীরা এই জয় পেয়েছেন। এমনকি জানুয়ারিতে দলটিতে তাদের নির্বাচনি প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারের অনুমতিও দেয়া হয়নি। এরপরও নির্বাচনে দলটি দেশটির জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, বড় ধরনের কারচুপির মাধ্যমে ভোট চুরি করা না হলে তাদের দল আরো বেশি আসনে জয়ী হত। পিপিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেরি রেহমান বলেছেন, রাজনীতি সব সময় অন্যকে হারিয়ে জয়ী হওয়া নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যারাই সরকার গঠন করুক না কেন তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, পার্লামেন্টে ও দেশে জনগণকে আশা দিতে চায় পিপিপি। নির্দিষ্ট সুবিধা এড়িয়ে যাওয়া এবং তৃণমূলে কাজের সময় ও সুযোগের ব্যবহার জনগণকে দেখিয়ে দেবে যে, রাজনীতি শুধু পৃষ্ঠপোষকতা নয়, বরং ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও জলবায়ুর চাপে থাকা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসা।’

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে নির্বাচন হয়। এতে ইমরান খানের পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পায়। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় তার দলের সরকার গঠনের সম্ভাবনা খুবই কম। এবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে। আর বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন।

সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, পাকিস্তানে কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায়— তাহলে সেই দল বা জোটকে অবশ্যই ১৩৩টি আসনে জয়ী হতে হবে। তবে ৮ তারিখের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, পিটিআই, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) দেশটির প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পিটিআই। মোট ৯২টি আসনে জয়ী হয়েছেন পিটিআই প্রার্থীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত