থাকছে না প্রতীক

স্থানীয় নির্বাচনে অদৃশ্য সমর্থন দেবে আ.লীগ

প্রভাব খাটাতে পারবেন না এমপিরা

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার কথা আগেভাগেই জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতীক না থাকায় দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে দলের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রার্থীদের প্রতি আওয়ামী লীগের অদৃশ্য সমর্থন থাকবে।

জানা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে অংশগ্রহণমূলক করার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে কাজ করবে ক্ষতাসীন দলটি। এবার স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রতীক দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে জেলা পর্যায়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো একক প্রার্থীকে সমর্থন দিলে এতে কেন্দ্রের কোনো আপত্তি থাকবে না। বিশৃঙ্খলা এড়াতে জেলার নেতারা কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতারা তা করে দিবেন। আর যেখানে গ্রুপিং আছে, নেতারা একজোট হবেন না; সেখানে দুই পক্ষ থেকেই স্থানীয় নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে। এতেও কেন্দ্রের কোনো আপত্তি থাকবে না। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের কোনো ধরনের প্রভাব খাটাতে দেবে না আওয়মী লীগ।

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, স্থানীয় নির্বাচনে দলের প্রতীক না দেওয়া একটা কৌশল। এরমধ্য দিয়ে সবার জন্য ভোটে অংশগ্রহণের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলে বিভিন্ন দলের জনপ্রিয় নেতারাও ভোটে অংশ নিতে পারবেন। তখন বহিষ্কার হওয়ার ভয় থাকবে না। এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে। যিনি জনপ্রিয় প্রার্থী তিনিই বিজয়ী হবেন। তবে বিশৃঙ্খলা এড়াতে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর প্রতি আওয়ামী লীগের একটা অদৃশ্য সমর্থন থাকতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ড সদস্য কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজনকে তো প্রার্থী করতেই পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় না হলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল শৃঙ্খলার বাহিরে চলে যাবে। আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দল। দলকে শৃংখলার মধ্যে রেখে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালনা করতে হয়। আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খলিত রাখার প্রচেষ্টা সব সময়ই থাকে। সেই বিবেচনায় স্থানীয় নির্বাচনে কারো প্রতি অদৃশ্য সমর্থন থাকতেই পারে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের উচিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। এ ছাড়া তো আর কোনো পথ খোলা নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যখন নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়, তখন সে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কথা বলে, নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলে। এতে মনস্তাত্তিকভাবে নৌকার বিরুদ্ধে তার মানসিকতা তৈরি হয়। এর ফলে দলের জন্য সুদূরপ্রসরী ক্ষতি হয়। আমরা সেই জায়গা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা বাদ দেওয়ার চিন্তা করেছি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের কোনো পক্ষকে ইন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু ভোটে দলীয় প্রতীক নৌকা থাকছে না। সে কারণে স্থানীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূল এবং অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে এমপিদেরই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। যারা কারসাজি করার চেষ্টা করবেন তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে।

দলীয় প্রতীক না থাকলেও তৃণমূলে আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে না বলেও মনে করেন সুজিত রায় নন্দী। তার মতে, আওয়ামী লীগ চেইন অব কমান্ডে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রশ্নে সব সময় আপসহীন। তবে যারা চেইন অব কমান্ড ভাঙার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।