নির্বাচন পরবর্তী সংকটে পাকিস্তান

সরকার গঠনের আলোচনা করেই দুই সপ্তাহ পার

* চতুর্থ বৈঠকেও সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ * সহিংসতা বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে * রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পাকিস্তানে জোট সরকার গঠন নিয়ে এখনো একমত হতে পারেনি কোনো দল। ক্ষমতা ভাগাভাগির ফর্মূলা নিয়েও সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি। গত শনিবার দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় কমিটির (সিসিসিএস) তৃতীয় বৈঠক হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চতুর্থবারের মতো দলগুলো আবারও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।

পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানে ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের বাস। ধীরগতির প্রবৃদ্ধি এবং রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জঙ্গি সহিংসতায় জর্জরিত দেশটি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশটির একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন, যেটি সংকটময় মুহূর্তে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পিএমএল-এন ও পিপিপি জাতীয় নির্বাচনে বিভক্ত ম্যান্ডেটের পরে সরকার গঠনের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। উভয় দলই জোট সরকার গঠনে তিনবার বৈঠক হয়েছে; কিন্তু একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। একমত হতে চতুর্থবারের বৈঠক হবে। গত শনিবারের বৈঠক শেষে পিএমএল-এন জানিয়েছে, উভয় পক্ষে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। শক্তিশালী একটি গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঘোষণায়। চতুর্থ বৈঠকটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে পারে। কারণ পিএমএল-এন, পিপিপি, পিএমএল-কিউ, এমকিউএমণ্ডপি এবং পিটিআই-পার্লামেন্টারিয়ানদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা পিএমএল-এন নেতা ইসহাক দার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দলটি শিগগিরই সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শেষ করার চেষ্টা করছে। পিএমএল-এন ও পিপিপির সমন্বয় কমিটিগুলো ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকার গঠন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার জন্য বসেছিল। এতে বুঝা যায় একাধিক দল সরকার গঠন নিয়ে আগ্রহী। বৈঠকে উভয় পক্ষের সমন্বয় কমিটি বিস্তৃত আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনাটি উভয় পক্ষের প্রস্তাবের ওপর জোর দিয়েছিল। বৈঠকে পিএমএল-এনের প্রতিনিধিত্ব করেন সিনেটর ইসহাক দার, সরদার আয়াজ সাদিক, সিনেটর আজম নাজির তারার এবং মালিক মুহাম্মদ আহমেদ খান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনীতি স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতিনির্ভর করবে আগামী পার্লামেন্ট গঠনের ওপর। এরই মধ্যে ভোটে কারচুপি ও ফল গণনায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। গত শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা অভিযোগ তুলে বলেছেন, নির্বাচনের ফল জালিয়াতিতে তিনিও জড়িত ছিলেন। তার দাবি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দেশের প্রধান বিচারপতিও এতে জড়িত ছিলেন। এ নিয়ে দেশটির চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে গত শুক্রবার দেশটির সিন্ধু প্রদেশের জামশোরো শহরে বিপুল জনসমাবেশ করে রাজনৈতিক জোট গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। সব দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো উপায় নেই। গত শনিবার রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী খান চাতা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিরুদ্ধে ‘বোমা ফাটানোর’ মতো এক অভিযোগ তুলেছেন। চাতার এ অভিযোগ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনতিবিলম্বে ও স্বাধীনভাবে একটি নিরীক্ষার দাবিকে আরো জোরালো করেছে। নির্বাচনের ফল জালিয়াতির ‘বন্দোবস্ত’ করে দেওয়ার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বলেছেন, এ অপরাধের জন্য যা শাস্তি হয় মেনে নেবেন। একই সঙ্গে ‘জনগণের দেওয়া রায় চুরির দায়ে’ দেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়ী করেছেন তিনি। গত ১০ দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের তোলা নানা অভিযোগকে ভিত্তি দিয়ে লিয়াকত আলী চাতা বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচনি আসনগুলোতে যেসব প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হচ্ছিলেন, সেসব প্রার্থীকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। আর যেসব প্রার্থী হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। লিয়াকত আলী চাতা অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘এই অপকমের দায় আমি নিচ্ছি এবং আপনাদের জানাচ্ছি যে এর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দেশের প্রধান বিচারপতি সম্পূর্ণভাবে জড়িত। একজন কমিশনার সাধারণ কোনো কর্মকর্তা নন। রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আমলাদের মধ্যে রয়েছেন তিনি। পুরো প্রশাসন দেখভাল করার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি এসব কর্মকর্তা বাছাই করে থাকে। পদাধিকার বলে তারা অনেক ক্ষমতার প্রয়োগ করেন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রে বড় প্রভাব বিস্তার করেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চাতার এই ‘স্বীকারোক্তি’ একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছে। ক্ষমতাধরদের চাপের মুখেও নতিস্বীকার না করে ইতিহাসের সঠিক পথে থাকাকে বেছে নেওয়ার নজির হিসেবে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর থেকে জোট সরকার গঠনে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির বড় দুটি দল। কারণ নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তবে এ লক্ষ্যে তাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হলেও কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে।