তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

আরএসএফের প্রতিবেদনে ভুল তথ্য আছে, বাস্তবতার প্রতিফলন নেই

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৩ সালের মে মাসে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে ভুল তথ্য আছে এবং সেখানে বাস্তবতার প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর প্রতিবেদন ও র‍্যাংকিং নিয়ে প্রেস ব্রিফ্রিংকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর ওয়েবসাইটে যে প্রতিবেদন ও র‍্যাংকিং প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা আছে। ওয়েবসাইটে ভুল, অর্ধসত্য ও অপর্যাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৬৩তম দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ক্রমবিকাশ, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য বর্তমান সরকারের অব্যাহত উদ্যোগকে অস্বীকার করা হয়েছে। দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার অবাধ স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্রের বিপরীতে আরএসএফের মূল্যায়ন অগ্রহণযোগ্য, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সত্যের বিচ্যুতি বলে সরকার মনে করে। তিনি আরও বলেন, আরএসএফের ওয়েবসাইটে ছয়জন সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম রতন, আহমেদ খান বাবু, গোলাম মোস্তফা রফিক, খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এবং এসএম ইউসুফ আলী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে তারা আটক হয়ে জেলে আছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী তাদের নিয়ে আরএসএফের এ দাবি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, আরএসএফ এর প্রতিবেদনে প্রচুর ভুল, অর্ধসত্য, অসত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে র‍্যাংকিং করা হয়েছে। এ ধরনের সূচক বা র‍্যাংকিংকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেকেই আমাদের সাথে কথা বলার সময় বলতে চান যে, আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এ র‍্যাংকিং পুনর্মূল্যায়নের জন্য আরএসএফকে দাপ্তরিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আরএসএফ’র বাংলাদেশ অধ্যায়ে বর্ণিত তথ্য অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত এবং বিভ্রান্তিকর। আরএসএফ’র দাবির বিপরীতে দেখা যায় ২০০৯ সাল থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সরকারি গণমাধ্যমের চেয়ে বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল সম্প্রসারণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ জনগণের ক্ষমতায়নসহ উন্নয়নমুখী নানা অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করে। জনকল্যাণে সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত সব উন্নয়ন কাজ জনগণের কাছেই তুলে ধরে এ দুটি সম্প্রচার মাধ্যম। ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে প্রতিনিয়তই সেতুবন্ধন তৈরি করছে বিটিভি ও বেতার। অথচ আরএসএফ রিপোর্টে উল্টোভাবে বলা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, সাইবার স্পেসকে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) চালু করে। তবে আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ডিএসএ বাতিল করে এর পরিবর্তে ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। এই আইনে সংবাদ প্রকাশের সাথে সম্পর্কিত মানহানি মামলায় সাংবাদিকদের গ্রেফতারের পরিবর্তে আইনি তলব করার বিধান রাখা রয়েছে। আইনগত প্রেক্ষাপট নিয়ে আরএসএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনের উদ্বেগ এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয়। এ বিষয়গুলো আরএসএফ এর পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত এবং তার একটা প্রতিফলন তাদের পরবর্তী প্রতিবেদনে থাকা উচিত। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা বজায় রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে বর্তমান সরকার গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জগ মোকাবিলায় বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সাংবাদিক পরিচয়পত্র নীতিমালা, ২০২২ চূড়ান্ত করেছে, ২০১৪ সালে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করেছে।

সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, মানসম্মত বেতন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করেছে এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ভালো উদ্যোগগুলো আরএসএফ’র প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। তিনি যোগ করেন, আরএসএফ’ সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান র‍্যাংকিং একবারেই বাস্তবতাবহির্ভূত। আরএসএফের এ ধরনের রিপোর্টকে পূর্ণাঙ্গ বলা যায় না। বাংলাদেশ সরকার চায় আরএসএফ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরুক এবং যে প্রতিবেদন অর্ধসত্য এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে তার পুনর্মূল্যায়ন করুক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্য দিয়ে অসত্য মোকাবিলা করতে চাই। গণমাধ্যমের পরিবেশ নিয়ে যেখানে সত্যিই উন্নতি করার সুযোগ আছে সেখানে সরকার তা করবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই আরএসএফ’র র‍্যাংকিংয়ের উপরে উঠতে চাই।