প্রধানমন্ত্রী আজ একুশে পদক বিতরণ করবেন

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দেশের ২১ বিশিষ্ট নাগরিককে ‘একুশে পদক-২০২৪’ বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক এই পুরস্কার প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।

পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। এ ছাড়া নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ, অভিনয়ে ডলি জহুর ও এমএ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তফা) ও রূপা চক্রবর্তী, চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষায় অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু একুশে পদক পাচ্ছেন। একুশে পদক দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক, এককালীন অর্থ (চেক) ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

গতকাল শেখ হাসিনা একুশে পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এবারের একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণিজনের পথ অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্ম জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে।

একুশে পদক ২০২৪ প্রদান উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তার দেয়া বাণীতে আরও বলেন, জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত মোট ৫৬৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এ পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বছর মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মরণে একুশে পদক প্রদান আমাদের সবাইকে জাতীয়তাবোধের চেতনায় ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে। যুগে যুগে অধিকার সচেতন বাঙালি জাতির বীরত্বগাঁথা লিপিবদ্ধ হয়েছে লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে অর্জনের ইতিহাসে। ভাষা আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের যে লড়াই শুরু হয়, তারই ধারাবাহিকতায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনায় পূর্ব বাংলার মানুষ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সফলতা লাভ করে। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যেসব বীর শহিদ আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দানকারী সে সময়ের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষাসৈনিকগণকে, যাদের দূরদর্শী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে এবং চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা হয়েছে।

একুশের শহিদগণ যেমন জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, তেমনি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সব গুণিজন জাতির গর্ব ও অহংকার- এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও প্রকৃত গুণিজন পুরস্কার বা সম্মাননার আশায় কাজ করেন না, তবু পুরস্কার-সম্মাননা জীবনের পথ চলায় নিরন্তর প্রেরণা জোগায়। একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখছেন, তাদের সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা গৌরবময় একুশে পদক প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে প্রতি বছর বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে জাতীয় পর্যায়ে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করা হতো। পদকপ্রাপ্তদের সম্মানী অর্থের পরিমাণও ছিলো যতসামান্য। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিদের পুরস্কার হিসেবে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ কয়েক দফা বৃদ্ধি করে গত ২০২০ সালে আমরা চার লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে গত ১৫ বছরে দেশের আর্থসামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বর্তমানে আমরা ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমাদের জনগণ, অর্থনীতি, সরকার ও সমাজব্যবস্থা পুরোটাই হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর।