একুশে পদক-২০২৪ বিতরণ

মাথা উঁচু করেই এগিয়ে যাবে বাঙালি জাতি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। কাজেই আমরা মাথা নত করে নয়, মাথা উঁচু করেই চলব এবং বিশ্বদরবারে মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাব। কারো কাছে হাত পেতে নয়।

গতকাল সকালে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট ব্যক্তির মাঝে ‘একুশে পদক-২০২৪’ প্রদানকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২১তমবারের মতো বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের স্বজনরা পদক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি, তিনি সেই সঙ্গে আমাদের একটা মর্যাদাবোধ দিয়ে গেছেন। বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। তিনি এ সময় ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে জাতির পিতা যখন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সে সময় প্রদত্ত ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন সেই মর্যাদাটা ৭৫-এর পর বাঙালি জাতি হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আজ আমি অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, আবার বাঙালি বিশ্বের দরবারে এখন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আর এই মর্যাদা আমাদের সমুন্নত রেখেই আগামীর দিনে এগিয়ে যেতে হবে।

শেখ হাসিনা আবারও তাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর আজ সুযোগ হয়েছে। দেশসেবার সুযোগ পেয়েছি। কাজেই যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হয়। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা আবদান রেখেছেন বা আমাদের দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অবদান রেখেছেন এবং আমাদের সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সম্মাননা দিতে হবে।

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার একটি শিক্ষিত, দক্ষ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন আধুনিক জনশক্তি হিসেবে আজকের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সমানে আমাদের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। কাজেই কেউই অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না এবং সবাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের দক্ষতা ও কর্মশক্তি বিকশিত করতে পারে সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেগুলো আমরা সংযুক্ত করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে যারা অবদান রাখছেন অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করে সম্মাননা দিয়ে আমরা নিজেকে ধন্য করব। এটাই হবে আমাদের প্রচেষ্টা।

এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন ২১ জন। যাদের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক (৯১)। দই বিক্রির টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি ও একটি বিদ্যায়তন। এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত জিয়াউল হক।

জিয়াউল হকের সমাজ সেবামূলক কাজের প্রশংসা করে তার পাঠাগরের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি সরকারিকরণের ব্যবস্থা করা যায় কি না সে উদ্যোগও নেবেন বলে জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউল হককে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা আনন্দিত এ জন্য যে, আমরা সারা বাংলাদেশে যদি খোঁজ করি এরকম বহু গুণিজন পাব। হয়তো দারিদ্রের কারণে না হয় কোনো সামাজিক কারণে হয়তো নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি। কিন্তু সমাজকে কিছু তারা দিয়েছেন, মানুষকে দিয়েছেন, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। তারা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। হয়তো যে অর্থ তিনি উপার্জন করেছেন তা দিয়ে আরো ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন, জীবনকে গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু, নিজের উন্নতি বা ভোগ বিলাসের দিকে না তাকিয়ে তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন যারা লেখাপড়া করতে পারছে না তাদের জন্য। ত্যাগী মানুষগুলোকে খুঁজে বের করারও অনুরোধ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এবার একুশে পদকে ভূষিতরা হচ্ছেন- ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর), ভাষা আন্দোলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, শিল্পকলায় (সংগীত) বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) শুভ্রদেব, শিল্পকলায় (নৃত্যকলা) শিবলী মোহাম্মদ, শিল্পকলায় (অভিনয়) ডলি জহুর, শিল্পকলায় (অভিনয়) চিত্রনায়ক এমএ আলমগীর, শিল্পকলায় (আবৃত্তি) খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা), শিল্পকলায় (আবৃত্তি) রূপা চক্রবর্তী, শিল্পকলায় (চিত্রকলা) শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, শিল্পকলায় (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিং) কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক, সমাজসেবায় রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলর), ভাষা ও সাহিত্যে লুৎফর রহমান রিটন, ভাষা ও সাহিত্যে মিনার মনসুর, ভাষা ও সাহিত্যে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন পদক বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসনা জাহান খানম স্বাগত বক্তৃতা করেন। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, সংসদ সদস্যরা, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।