ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিনম্রচিত্তে অমর একুশে পালিত

* রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন * বাংলাকে জাতিসংঘের ভাষা করার দাবি
বিনম্রচিত্তে অমর একুশে পালিত

অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান উভয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা বাজার সাত মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছান। এর তিন মিনিট পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান। অমর একুশের ঐতিহাসিক অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি... আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতির পরই প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা ভাষা বীরদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে শহীদ মিনারে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। পরে তিন বাহিনী প্রধানগণ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ (বিজিবি), যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ (ডিইউএএ) শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এরপর সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহীদ মিনার খুলে দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষা বীরদের সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগকে স্মরণ করার জন্য সর্বস্তরের শত শত মানুষ হাতে ফুল নিয়ে এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গুনগুন করে গেয়ে খালি পায়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। যে কোনো জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃত্যুর উত্তরাধিকার-মরতে জানা ও মরতে পারার উত্তরাধিকার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন।

১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখণ্ডরাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরে মানুষের ঢল নামে। রাত ১২ টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রথম ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ। এরপর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, শ্রমজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে পবিত্র ফতেহাপাঠ করে বঙ্গবন্ধুসহ ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় করা হয় দোয়া ও মোনাজাত।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে ৩৫ কোটির বেশি বাংলা ভাষাভাষী আছে। সুতরাং পৃথিবীর অন্যতম প্রচলিত ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অবস্থান। যে কারণে আমরা বাংলা এবার জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবো। গতকাল বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানে শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। হাসান মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি জাতির জন্য বিশাল অর্জন। আজ আমাদের স্বপ্ন হলো বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষায় রূপান্তর করা।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে- আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্প্যানিশ। এর আগে কয়েকবার বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আর্থিক কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন যে, দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা চালু করার প্রস্তাবে কোনো সদস্য রাষ্ট্রের বিরোধিতা না থাকলেও অর্থের জন্য জাতিসংঘের পক্ষে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, জাতিসংঘে একটি নতুন দাপ্তরিক ভাষা চালু করার জন্য তাদের প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত