ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে পাহাড় কেটে কউকের আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প!

পরিবেশ অধিদপ্তর ও বেলার পৃথক নোটিশ
কক্সবাজারে পাহাড় কেটে কউকের আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প!

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এলাকায় পাহাড় কর্তনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে অবশেষে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত সোমবার কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশটি প্রেরণ করেন। একই সঙ্গে এই পাহাড় কাটা বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৯ জনকে নোটিশ প্রদান করেছে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা গত মঙ্গলবার ডাক যোগে নোটিশটি প্রদান করেন। এ নোটিশটি দেয়া হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক বরাবর।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত নোটিশটিতে পাহাড় কর্তন কার্যক্রম বন্ধপূর্বক আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারা লংঘনের দায়ে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ কারণ দর্শানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারা অনুযায়ী পাহাড় কর্তন আইনত দণ্ডনীয়। সরেজমিন তদন্তে দেখা যায় যে, পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডে কলতলী বাইপাস রোডের পশ্চিমে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)-এর আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১-এর অভ্যন্তরে পাহাড় কর্তন করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন- ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬খ ধারা লংঘিত হচ্ছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে পাহাড় কর্তন করার দায়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬খ ধারায় অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

পাহাড় কর্তনের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শন করে কউককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে পাহাড় কাটা বন্ধ করে তথ্য প্রমাণাদি জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বেলার আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত নোটিশটিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলাগুলোতে পাহাড় কাটা বন্ধে ২০১১ সালে জনস্বার্থে বেলার একটি মামলা করে। ১৯ মার্চ ২০১২ সালে চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত উল্লেখিত জেলাগুলোতে অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে আদালত উল্লেখিত এলাকায় পাহাড় কেটে কোনো আবাসন প্রকল্প বা ইটভাটা স্থাপন করা হয়ে থাকলে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ প্রদান করেন।

আদালতের নির্দেশ থাকার পরও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে বেলা হাইকোর্ট বিভাগে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন দাখিল করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ এ বিভাগের সকল পাহাড়ের তালিকা (দাগ, খতিয়ানসহ) এবং পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও তা আদালতে জমা প্রদানের এবং আদালত কর্তৃক ২০১২ সালের ১৯ মার্চ রীট পিটিশন নং ৭৬১৬/২০১১ এ প্রদত্ত রায়ের আলোকে পাহাড় কাটারোধে সরকারের সংস্থাগুলো কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে।

আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার কলাতলী এলাকায় পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, পাহাড়ের চূড়া থেকে মাটি কেটে নিচে নামানো হচ্ছে এবং অন্যটি দ্বারা পাহাড় কাটা মাটি ট্রাকে তুলে তা দ্বারা ভরাট করা হচ্ছে রাস্তার পাশে বিদ্যমান জলাধার। প্রচলিত আইন ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পাহাড় কাটা-মোচন ও জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই বেলা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে উল্লেখিত পাহাড়ের যে পরিমাণ কাটা হয়েছে, সেখানে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণের এবং রিটেইনিং ওয়াল স্থাপনের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে কক্সবাজার জেলার সর্বশেষ বিদ্যমান পাহাড়গুলোকে আরো ক্ষতি, ধ্বংস ও কর্তন তেকে রক্ষার জন্য সব প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাহাড় কাটাবিষয়ে আদালতের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রতিটি পাহাড়ে প্রদর্শন করার অনুরোধ জানাচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ের মাটি দ্বারা জলাধার ভরাটের সকল কার্যক্রম বন্ধে ও এরই মধ্যে ভরাটকৃত জলাশয় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে কোন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ২টি ভবনের পূর্ব ও উত্তর পাশে বিদ্যমান টিলা জাতীয় দুইটি উঁচু জমি থেকে প্রতি বর্ষাকালে মাটি ধসে পড়ে এবং এতে ভবন দুইটির বেইজমেন্ট ও নিচতলার মালামাল এবং কর্তব্যরত শ্রমিকদের জীবন হুমকির মধ্যে থাকে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এরূপ দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে ওই খাড়া টিলার পাশগুলো কেটে ৪৫ ডিগ্রি ঢাল সৃষ্টি করে, তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর মাধ্যমে ‘ঢাল স্থিতিকরণ’-এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পাহাড় কাটা সংলগ্ন সংবাদ প্রকাশের পর পৃথক এই নোটিশ দুইটি প্রদান করা হলো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত