ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা হয়েছিল

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা হয়েছিল

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে একসময় মুছে ফেলা হলেও এখন আর কেউ তা পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুছিয়ে ফেলা হয়েছিল। এখন তা মুছতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেই একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা করা, ছুটি দেওয়া, শহীদ মিনার তৈরি প্রকল্প গ্রহণ ও বাজেট দিয়েছিল।

গতকাল বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা এখানে সমাবেত হয়েছি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশ ও বাঙালি, আজকে বিশ্বের বুকে যে পরিচয়টা পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, এই উপমহাদেশে একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। সে জাতি-রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে। ১৯৪৭ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়, সেখানে বলা হয়- রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা এই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন তমদ্দুন মজলিশ এবং আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে। তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানান। এর মধ্যদিয়েই ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আইন বিভাগের ছাত্র থাকাকালে পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগ গঠন করেন। আর ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠিত। এই দেশের যতটুকু অর্জন, তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ১৯৫৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করত; আমি ছিয়ানব্বই সালে সরকার গঠন করে এসবির অফিস থেকে সমস্ত ফাইল সংগ্রহ করি। আমার সাথে ছিল বেবী মওদুদ। দুইজনে মিলে ফাইলগুলো পড়ি। ভাষা আন্দোলনে তিনি কী কী কাজ করেছেন, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম খণ্ডেই অনেক তথ্য পাবেন। রিপোর্টগুলো যেহেতু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখনই তথ্যগুলো নিয়ে একবার বক্তব্য দিলাম, আমাদের দেশের একজন লেখক (বদরুদ্দিন ওমর), যারা বাবার ভাষা আন্দোলন ও তার অবদান নিয়ে লেখেন, তিনি আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখলেন- আমি নাকি এই সমস্ত তথ্য বানিয়ে লিখেছি। আমি আর বেবী মওদুদ তথ্যগুলো নিয়ে এমআর আক্তার মুকুল ভাইয়ের বাসা যাই। আমরা তো চুনাপুঁটি, আমরা লিখলে হবে না। তাই মুকুল ভাইকে বললাম- আপনি লিখবেন, আপনি জবাব দেবেন। উনি লিখলেন, তারপর আর কোনো কথা নেই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা, এটা আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ করত। এখনো দেখবেন, যা কিছু করেন কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। ভালো না লাগার গ্রুপই আমাদের বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। তাদের কিছু ভালো লাগেনা, এটাই হলো বড় কথা। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যারা অস্বীকার করছে, সরকারের কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু আঁতেল একসময় বলেছে, শেখ মুজিব ভালো প্রশাসক ছিলেন না। অথচ, যে সেক্টরে হাত দিয়েছি, দেখেছি মূল কাজটা বঙ্গবন্ধু করে দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ করেছেন। স্বল্পোন্নত দেশ করে দিয়ে গেছেন। তার দেখানো পথেই আমরা এগিয়েছি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত