অবৈধ মজুতদারদের গণধোলাই দেওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

* জার্মান সফরে নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি * রাজধানীতে হবে আরো পাঁচটি মেট্রোরেল * দেশে রাজনৈতিক দলের অভাব

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে যারা বাজার অস্থিতিশীল করতে চায় তাদেরকে গণধোলাই দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জার্মানির মিউনিখে তিন দিনের সফরের বিষয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর এটা তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন। মজুতদারদের গণধোলাই দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় বাংলাদেশে অভাব হলে শোনা যেতো পেটে ভাত নেই। আর এখন কি বলে, তেলের দাম পেঁয়াজের দাম, গরুর মাংসের দাম, এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরের এই পরিবর্তনটা আসছে, সেটা তো স্বীকার করবেন। ১৫ বছর আগে কি ছিল, ভাতের জন্য হাহাকার ছিল, নুন ভাত, ভাতের ফেন ভিক্ষা চাইত। এখন তো এগুলো নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, যারাই এই নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, তারা যখন দেখল, নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না। তখন চক্রান্ত হলো, যে জিনিসের দাম বাড়ালে সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করবে। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ, এই চক্রান্তটা আছে। আমাদের প্রচেষ্টা সব সময়, যখন করোনাভাইরাসের অতিমারি দেখা দিল, সারা বিশ্বব্যাপী স্যাংশন এলো, পণ্য পরিবহনে যখন বাধাগ্রস্ত হলো, তখন থেকেই আমি বলে আসছি- আমাদের নিজেদের খাদ্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এক ইঞ্চি জায়গা যেনো ফাঁকা না থাকে, অনাবাদি না থাকে। এভাবে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রশ্নকারী সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার কি মনে হয় আপনি নিজেই তো বলেছেন ডিম লুকিয়ে রেখেছে। না যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে তাদের এখানে কারসাজি আছে? এর আগেও এ রকম পেঁয়াজের খুব অভাব, বস্তাকে বস্তা পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কি করা উচিত? সেটা আপনারাই বলেন। এদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। কারণ আমরা সরকার কিছু করলে বলবে, সরকার করেছে। পাবলিক যদি প্রতিকার করে, তাহলে সব থেকে ভালো, কেউ কিছু বলবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর দাম বাড়াবে!

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রমজানে কোনো কিছুর অভাব হবে না। এর মধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না। ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং, এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি।

‘বাজার ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি কীভাবে মোকাবিলা করবেন?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে। আপনারা জানেন, আমি আসার পর থেকে বার বার আমাকে বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেনো না যেতে পারি। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরেন না কেনো। রাসেলকে ছাড়েনি, কারণ যেন ওই রক্তের কেউ বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি এবং আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম বেঁচে গেছি। তার পরে আমি ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি, আমার চেষ্টাই হচ্ছে- যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেটাই পূরণ করা। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবার হচ্ছে, বার বার হয়েছে। আজকে মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। নির্বাচনটা যাতে না হয়, তার জন্য একটা বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের কথা একবার চিন্তা করেন, ২০১৩ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৩/১৪/১৫ এর পর আবার গত বছরের ২৮ অক্টোবর। এগুলো তো আর হঠাৎ করে হয় না, এটা পরিকল্পিতভাবে।

রাজধানীজুড়ে আরো পাঁচটি মেট্রোরেল হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ায় যানজট কিছুটা সহনশীলতা হয়েছে। রাজধানীতে মেট্রোরেল পুরোটা হয়ে গেলে এর সুফল আরো পাওয়া যাবে। এছাড়া আরো পাঁচটা মেট্রোরেল ঢাকাজুড়ে করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের বাঙালি কিছু আছে ভালো লাগে না। একটা দলই আছে কিছু ভালো লাগে না, যখন আবার কাজ শেষ হয়, তখন আবার তারা সুফল ভোগ করে।

বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা সব দিক থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষায় মানুষের মানমর্যাদা উন্নত করতে পারছি। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশ হবে, সেই কাজটা যেন আমরা যথাযথভাবে করতে পারি, সেটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। সেই কাজটা করতে একটা কমিটি হয়েছে, সেভাবে কাজ করা হবে। বাংলাদেশ রাজনৈতিক দলের অভাব। আওয়ামী লীগ ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নানান আন্দোলন সংগ্রাম করে এগিয়ে গেছে। আমাদের প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল। একটা হলো যুদ্ধাপরাধীদের দল, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল; কিন্তু জিয়াউর রহমান আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরও ক্ষমতায় বসিয়ে ছিল খালেদা জিয়া। আমি যদি দুইটা দলের কথা বলি, যারা মিলিটারি ডিক্টাটারি পকেট থেকে তৈরি হয়েছে, একটা হলো বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। তারা জনগণের চিন্তা-চেতনা না করে, তারা চায় দেশের মধ্যে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক, কেউ এসে ক্ষমতা বসিয়ে দেবে।

জার্মানি সফরে কেউ প্রশ্ন তোলেনি বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবারের সফরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। কোনো কোনো দেশে একটা নির্বাচনের রেজাল্ট করতে ১২-১৫ দিন সময় লাগে, সেই নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার। আর বাংলাদেশে এতো সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেই নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার না। এই রোগের ওষুধ আমাদের কাছে নেই। আমাদের শক্তি হলো জনগণ, অন্য কেউ নয়। এখন মনে হয় তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা আসছে, কেউ প্রেসিডেন্ট হবে। ওই রকম যদি বাংলাদেশ হতো, তাহলে তাদের জন্য ভালো হতো। সেটা হয়নি দেখেই তাদের মন খারাপ। তবে তাদের মন ভালো হয়ে যাবে।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করি। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মূলত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫ জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেছেন। বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, সফরের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি ‘ফ্রম পকেট টু প্লানেট, স্ক্যালিং আপ ক্লাইমেট ফিন্যান্স সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এই আলোচনায় আমার সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমর মিয়া আমোর মটলে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জামির। প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে, এই বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য বিশ্বের সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুবিধ নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রতিশ্রুত অর্থের বাস্তবিক হস্তান্তর, ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিতকরার উপর আমি বিশেষভাবে জোর দিই। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় আমি ধনী দেশসমূহের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। এদিন আমার হোটেল সাইটে ওমেন পলিটিক্যাল লিডার্স (ডব্লিউপিএল)-এর সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সিলভানা মেহরিন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান এবং গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নারীর রাজনৈতি ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য আমাকে ডব্লিউপিএল-এর ট্রেইলব্ল্যাজার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ গ্রহণের জন্য তিনি আমাকে আগামী ২০ মার্চ এথেন্সে অনুষ্ঠিতব্য ডব্লিউপিএল সামিটে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

আলোচনায় বাংলাদেশের সরকারের বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত নীতিসমূহের বিষয়ে আলোকপাত করলে এ বিষয়ে পশ্চিমাবিশ্বের বাংলাদেশের নীতি ও কার্যক্রমগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, একইদিন আমি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরাহমান আল-থানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনাকালে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবরাহ প্রভৃতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতার সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করি। সফরের দ্বিতীয় দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠককালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান তিনি। একইদিন সকালে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস. জয়শঙ্কর। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। সাক্ষাৎকালে আমরা উভয়ই দুই বন্ধু-রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি এবং দুদেশের বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করি।

এরপর আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যামেরনা। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রেরিত শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এসময় আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান চলাচল অংশীদারিত্ব, অভিবাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ইউক্রেন ও গাজা উপতাকায় চলমান যুদ্ধ এবং মিয়ানমার ও লোহিত সাগরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি।

একই দিনে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সেভেনিয়া শুলৎজা। আলোচনাকালে ইইউ-এর জিএসপি, বাণিজ্য সুবিধাসহ পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ এবং সার্বিক জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বর্ধিতকরণে বিষয়ে আশা প্রকাশ করা হয়।