২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনের মুখে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী ক্যাম্পাস করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদন দেয় একনেক সভা। প্রকল্পটির জন্য ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২০ সালের অক্টোবরে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২ বছরের জায়গায় ৫ বছর হয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে তিনবার। কবে শেষ হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। এনিয়ে আবাসন সংকটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না। নতুন ক্যাম্পাসের অপেক্ষায় আছেন শিক্ষকরাও। তবে দ্রুত শেষ করার প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন কেরানিগঞ্জে জবির নতুন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। তবে ক্যাম্পাসটির জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও বাকি এখনো ১১.৪০ একর জমি। গত বছরের ১৭ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি’ এক সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ওই অবশিষ্ট ১১.৪০ একর জমি অনুমোদন করা হয়। তবে অনুমোদনের প্রায় ১০ মাস পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঢাকা জেলা প্রশাসন। এতে সীমানা নির্ধারণ না হওয়া প্রাচীরের কাজ থমকে আছে। এছাড়া নিচু সম্পূর্ণ জমি ভরাট করে ভূমি উন্নয়নের মতো বড় কাজও থমকে আছে।
এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় অবশিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়নসহ এখনো বাকি রয়েছে প্রকৌশলী ভবন নির্মাণ, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সারফেস ড্রেন নির্মাণের কাজ। এরমধ্যে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন ক্যাম্পাসে ৫ তলার প্রকৌশলী ভবনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তবে সে টেন্ডার বাতিল করে পরপর আরো দুইবার ভবনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এদিকে ২০১৬ সালে হল আন্দোলনের পর নতুন ক্যাম্পাস হওয়া ঘোষণা শুনে আনন্দিত হলেও অপেক্ষা প্রহর কাটছে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। প্রায় ২০ হাজারে শিক্ষার্থীদের ছেলেদের জন্য নেই কোনো হল। মেয়েদের জন্য রয়েছে মাত্র ১টি হল। আবাসন সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমাদের হল নেই। ক্যাস্পাসে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। আর কতদিন হলবিহীন থাকা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে শুনছি নতুন ক্যাম্পাস হচ্ছে। কিন্তু আর কতো দেরি। অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে। দ্রুত ক্যাম্পাস ও আগে হল বাস্তবায়ন চাই। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে হল, একাডেমিক ভবনের প্রকল্প আসবে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ বলেন, লেক ও পুকুর খননের কাজ শেষ হয়েছে। ২০০ একরের মধ্যে ১২ একর জমি অধিগ্রহণ বাকি। সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। ভূমি উন্নয়নের টেন্ডার মূল্যায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। নতুন ক্যাম্পাসটির ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৩ বার। এ বছরের জুন মাসে তৃতীয় মেয়াদও শেষ হবে। এমতাবস্থায়, নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শুরু করা ও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন ও দ্রুত ছেলেদের হল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইভান তাহসিফ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা হলো অনাবাসিকতা। মেয়েদের একটি হল থাকলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে তা শূন্য। নতুন ক্যাম্পাসে অবকাঠামো সকল উন্নয়ন করার আগে সুপরিকল্পিতভাবে ছেলেদের হল করা হলে সব কিছুর জন্যই ভালো হবে।
একই কথা বলেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণ কিছুটা বাকি আছে। এটা দ্রুত শেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিতে হবে। ছেলেদের জন্য আগে হল করতে হবে। দ্রুত এ সকল কাজ করা প্রয়োজন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।