ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সফর শেষে বিশ্বব্যাংকের এমডির বিবৃতি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা

বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) আন্না বিজার্ড। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে জরুরি ভিত্তিতে গভীর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গত রোববার বাংলাদেশে তার প্রথম সফর শেষে এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে বিজার্ড বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিতে দ্রুত এবং সাহসী সংস্কার বাংলাদেশকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, আর্থিক খাতের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন তিনি। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি তাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়ের প্রয়োজন মেটাতে দুটি প্রকল্পে ৬৫ কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছে বিশ্বব্যাংক ও সরকার। অর্থায়নের প্রায় অর্ধেক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যয় করা হবে এবং অনুদানের শর্তেই তা ব্যয় করা হবে। বিজার্ড বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব নিয়ে আমি গর্বিত। দেশটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সহায়তা করেছে। আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে তুলতে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং জলবায়ুর অভিঘাত ও ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা অব্যাহত রাখব এবং একই সঙ্গে কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করব। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের নেতাদের এবং নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) অর্থায়নে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ ও রেয়াতি ঋণ আকারে প্রায় ৪১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

এর আগে বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনা বিজার্ড সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের কাছে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল এবং জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে রেয়াতি হারে আরও ঋণ কামনা করেন। বিশ্ব ব্যাংককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা (ডব্লিউবি) বাংলাদেশের নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল দিতে পারেন। বিশেষ তহবিলটি নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তারা নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশে কোনো লিঙ্গ বৈষম্য নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা এখন কৃষি থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বিচার বিভাগ পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে বলে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, তার সরকার নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা সংক্রান্ত যে কোনো প্রকল্প বা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাংলাদেশ অন্যতম অগ্রপথিক।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংক আমাদের রেয়াতি হারে আরো ঋণ দিতে পারে।’ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের হার এবং ব্যাংকের হারের মধ্যে পার্থক্য থাকার বিষয়ে তিনি বলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মূল্যের আকস্মিক ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের জন্য জন্য একটি ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। আনা বজেরদে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ক্ষুদ্র অর্থনীতির সংস্কারের উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সংস্কারে সহায়তা করছি এবং সংস্কার ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’ তিনি সংস্কারে ভালো করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলেই বাংলাদেশ নতুন তহবিল পাবে।’ তিনি প্রকল্পের প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নেও গতিশীলতা আনার আহ্বান জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। প্রথমবারের মতো এক দিনের সফরে শনিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারও তার সঙ্গে ছিলেন। গত শনিবার বিশ্ব ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ যেসব উন্নয়ন সহযোগীর সমর্থন পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বিশ্ব ব্যাংক। এরপর থেকে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ৪১ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যার বেশিরভাগ অনুদান কিংবা রেয়াতি ঋণ। বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের অধীন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) আওতায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত