ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন

মনোনয়নেই নির্বাচিত হলেন ৫০ জন এমপি

আজ গেজেট প্রকাশের পর শপথ গ্রহণ
মনোনয়নেই নির্বাচিত হলেন ৫০ জন এমপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনে ৫০ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ যে ৪৮ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছেন সবাই এমপি হয়ে গেছেন। এছাড়া জাপা যে দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন তারাও নির্বাচিত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, সংবিধান অনুযায়ী কাগজে-কলমে নারী আসনে ভোটের বিধান থাকলেও এ নির্বাচনে আসলে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। দলগুলো যাকে মনোনয়ন দেয় তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের অগ্রহ কম থাকে।

ইসি জানায়, গত রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার সংরক্ষিত ৫০টি আসনের একক প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেন। আগামী ১৪ মার্চ এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। এই নির্বাচনের ভোটার জাতীয় সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তবে কখনো ভোট হতে দেখা যায়নি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে বিভিন্ন দল বা জোটের পাওয়া আসনের সংখ্যানুপাতিক হারে নারী আসন বণ্টন করা হয়। ১৪-দলীয় জোটের দুটি আসন এবং স্বতন্ত্র ৬২ জন সদস্যের সমর্থন নিয়ে এবার আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৪৮টি আর জাতীয় পার্টি পেয়েছে দুটি সংরক্ষিত আসন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৪টি আসন। জাতীয় পার্টির আসন ১১টি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টির আসন একটি, জাসদ পেয়েছে একটি আসন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ১৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বাছাইয়ে সবার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় ৫০ জনকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী নারী প্রার্থীদের গেজেট আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হতে পারে। গেজেট প্রকাশের পর শপথ নেবেন ৫০ নারী সদস্য। জানা যায়, নারীর ক্ষমতায়নে সংরক্ষিত যে ৫০টি আসন রয়েছে নিয়ম থাকলেও সেখানে কখনোই নির্বাচন হয় না দলীয় সমঝোতার কারণে। সুতরাং দলীয় মনোনয়ন পেয়েই যে কেউ হয়ে যান পাঁচ বছরের জন্য এমপি। তারা নিজেরা কিংবা নারী সমাজকে কতটুকু ক্ষমতায়িত করতে পারেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন সময়। সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপিদের কেউ কেউ বলছেন, সাধারণ আসনে নারীদের দলীয় মনোনয়ন বাড়ানো হলে সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, সাধারণ আসনে একজন নারীকে প্রতীক দিয়ে ভোট করতে দিলে নারী অনেক দূরে এগিয়ে যেতে পারে। এখন যদি এটা ৫০ শতাংশ না করা যায় তাহলে অন্তত ৩০ শতাংশ সাধারণ আসনে মনোনয়ন দেয়া উচিত। তাহলে আর সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন পড়বে না। স্থানীয় সরকার বিশেজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে নারী আসনের প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হয় না। শুধুমাত্র কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলো ভোগ করতে দেয়ার জন্য এমপি মনোনয়ন দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না। তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও এখনো নারী আসনের গুরুত্ব ফুরিয়ে যায়নি। হয়তো আরো কিছুদিন লাগবে। কিন্তু এখনি বাদ দেয়া উচিত হবে না। সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি হলেন যারা, রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দ্রৌপদী দেবি আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), কোহেরী কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর), জারা জেবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মে ফারজানা সাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিরা বিনতে আমির (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), পারভীন জামান কল্পনা (ঝিনাইদহ), অ্যারোমা দত্ত (কুমিল্লা), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), মুন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), শবনম জাহান (ঢাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), শাম্মী আহমেদ (বরিশাল), নাহিদ ইজহার খান (ঢাকা), ঝর্ণা আহসান (ফরিদপুর), ফজিলাতুন নেছা (মুন্সীগঞ্জ), সাহেদা তারেক দীপ্তি (ঢাকা), অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নরসিংদী), তারানা হালিম (টাঙ্গাইল), শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর), অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), হাসিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), নাজমা আক্তার (গোপালগঞ্জ), ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর), আশরাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর), কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী) দিলারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), ডরথি তঞ্চঙ্গা (রাঙ্গামাটি), সানজিদা খানম (ঢাকা), নাছিমা জামান ববি (রংপুর), নাজনীন নাহার রোশা (পটুয়াখালী), ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম), রুমা চক্রবর্তী (সিলেট)। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন নাহার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত