ফিলিস্তিনের বিপক্ষে অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধ করতে হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ইসরায়েলের বিভ্রান্তিকর অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধের জন্য একটি সহযোগিতামূলক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর তথ্যমন্ত্রীদের ইসলামিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে এ প্রস্তাব করেন তিনি। গতকাল তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশেষ অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। ওআইসি মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা, ফিলিস্তিনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী নাবিল আবু রুদিইনেহ, তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরের প্রেসিডেন্ট ফাহরেতিন আলতুন অধিবেশনের উদ্বোধন পর্বে বক্তব্য দেন। ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রের তথ্যমন্ত্রীরা বিশেষ এ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন এবং ২৫ জন তথ্যমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের হয়ে বক্তব্য দেন। বিশেষ এ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে সাংবাদিক ও মিডিয়া আউটলেটের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের অপতথ্য ও শত্রুতা’। অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘গাজায় যেভাবে সাংবাদিকদের ক্রমাগত হত্যা এবং অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটছে, তা বিশ্ব খুব কমই দেখেছে। এই ধরনের অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অধিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশ্ব মিডিয়াতে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিভ্রান্তিকর অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে একটি সহযোগিতামূলক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। আমি ওআইসি সচিবালয়কে অবিলম্বে এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের দলিল সংবলিত একটি মানসম্মত তথ্য ও দলিল পুল প্রতিষ্ঠার জন্য ওআইসি সচিবালয়ের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। সচিবালয় নিয়মিত সব সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে এসব তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। ওআইসি সচিবালয় ইসরায়েল দ্বারা ছড়ানো অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও পরিচালনা করতে পারে।’

এ সময় মোহাম্মদ আলী আরাফাত আরো যোগ করেন, ‘ইসরায়েল গাজায় যে নিষ্ঠুরতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করছে, তা আড়াল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করেছে। ইসরায়েলের ঘৃণ্য বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শিশু, মহিলা, বয়োজ্যেষ্ঠ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নির্বিচারে টার্গেট করাসহ নির্লজ্জ যুদ্ধাপরাধ ঢাকার প্রচেষ্টা।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হত্যাকাণ্ড একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করছে এবং দখলকৃত জনগণকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং বিশ্বকে সত্য জানাতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে এবং তাদের পাশে রয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী আরাফাত তার বক্তব্যে সাত দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলো হলো প্রথমত, ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ করা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য একটি মানবিক করিডোর খোলা রাখা; তৃতীয়ত, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা এবং আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন করা; চতুর্থত, জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপে সব সম্মত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা; পঞ্চমত, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহর দ্ব্যর্থহীন ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘের রেজুলেশন ২৪২ এবং ৩৩৮ এর অধীনে ১৯৬৭ এর পূর্ববর্তী সীমান্তে পাশাপাশি বসবাসের জন্য একটি পরিষ্কার সময়রেখার পরিকল্পনা করব; ষষ্ঠত, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী দ্বারা পরিচালিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার নিন্দা জানিয়ে সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তোলা এবং নিরপরাধ বেসামরিক ও পেশাজীবীদের হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা এবং সপ্তমত, ওআইসি মিডিয়া ফোরাম প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলাদেশে বৈশ্বিক গণমাধ্যম তৈরিতে সহযোগিতা করবে কাতার : এদিকে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে বৈশ্বিক গণমাধ্যম তৈরিতে সহযোগিতা করবে কাতার। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর তথ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনের সাইডলাইনে স্থানীয় সময় গত শনিবার বিকালে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত কাতার মিডিয়া করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল আজিজ বিন থানি আল-থানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় এ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। আলজাজিরার মতো বৈশ্বিক গণমাধ্যম তৈরির অভিজ্ঞতার আলোকে কীভাবে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও কাতারের মিডিয়া করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ সময় গণমাধ্যম সেক্টরে দুই দেশের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনমিয়ের ব্যাপারে তারা উভয়ে একমত পোষণ করেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।