মার্চ থেকে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

স্বস্তিদায়ক সরবরাহের নিশ্চয়তা চান গ্রাহক

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গরমের মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে দাম বাড়াচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়বে, নতুন দাম মার্চে কার্যকর হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও নিরবচ্ছিন্ন না হলেও অন্তত স্বস্থিদায়ক বিদ্যুৎ সরবরাহ চায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ কিছুটা কমবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। গ্রীষ্মকালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে। এমন টার্গেট নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর বিপরীতে ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এবার বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক থাকবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি চালু থাকবে। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনার পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকপ্রান্তে সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের লক্ষ্যে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুফল যেন ব্যবসায়ীরা পাায়। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকলে পণ্য উৎপাদন সহজ হবে। এবার গরমে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের অস্বস্তি বেশ খানিকটা দূর হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সরকারের সিস্টেম লস কমাতে হবে। এটাকে কমিয়ে একদম মিনিমামে নিয়ে আসতে হবে। যে অবৈধ বিদ্যুতের লাইনগুলো আছে, সেগুলো কমাতে হবে। কারণ এগুলোর কারণে বৈধ গ্রাহকরা সমস্যায় পড়েন।

রাজধানী উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দারা বলছেন, সরকার বছরে পর বছর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলছে। আর জনগণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। আগামী মাসে বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানো হবে। বাড়তি দামে বিদ্যুৎ ব্যবহার যাতে শতভাগ নিশ্চিত হয় সেটিও দেখতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগকে। যাতে গত বছরের মতো এবারও গ্রীষ্মকালে সারা দেশে বিদ্যুতের বিপর্যয় না ঘটে। কারণ অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তীব্র দাবদাহে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বাসিন্দারা ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চায়। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বেশি চালানোর ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের টার্গেট রয়েছে।

মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেয়ে মহাখুশি। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছোট-বড় হাঁট-বাজার এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও মানুষ স্বস্তি চান। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলে শিল্প কারখানা ও জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। গড়ে ওঠে ছোট-বড় অনেক শিল্প কল-কারখানা।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়বে, মার্চে নতুন দর কার্যকর হবে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী একে মূল্যবৃদ্ধি বলতে নারাজ। তিনি বলেন, খরচের চেয়ে বেশি দাম নিলে মূল্যবৃদ্ধি বলা যেত। এখন ঘাটতি অনেক, তাই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে তা খুবই কম পরিমাণে। নসরুল হামিদ বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করার সময় মার্কিন ডলারের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এখন ডলারের দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। জ্বালানি খরচের ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বেই দাম সমন্বয় করা হয়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বুঝতে হবে, আমরা যে জ্বালানি ব্যবহার করি সেটা প্রাইসিংয়ের ওপর বিদ্যুতের দাম নির্ভর করে। আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন নিয়ে এসেছি, সেই সময় ডলারের যে মূল্য আর কয়লার যে দাম ছিল তার থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা এখন যে কাজটা করছি, খুবই অল্প পরিমাণে, ৩৪ পয়সা পার ইউনিট নিচের লেভেলে। আমাদের লাইফ লাইন গ্রাহক আছে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ, যারা চার টাকা করে কেনেন। আর উপরের দিকে যারা আছেন, সাত টাকা করে তাদের চার্জ হয়। আমাদের উৎপাদন খরচ পড়ে গড়ে ১২ টাকা। সরকারের একটা বড় অংশ কিন্তু এখানে ভর্তুকি হিসেবে যোগ হচ্ছে। এই ভর্তুকির পরিমাণ আরও বেশি বেড়েছে ডলারের দামের কারণে। আমরা যদি এটা সময় মতো সমন্বয়ে না যাই ধীরে ধীরে; আমাদের লক্ষ্য হলো আগামী তিন বছর আমরা এটাকে (বিদ্যুতের দাম) সমন্বয় করব। যাতে একটা সহনীয় পর্যায়ে থেকে সমন্বয় হয়, সেটার একটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমরা যাচ্ছি ৩৪ পয়সা, উপরের লেভেলে হয়তো ৭০ পয়সা; এভাবে আমরা দাম নতুন করে সমন্বয় করছি।

গত বছর গরমের মৌসুমে রাজধানীর বাসিন্দার চেয়েও লোডশেডিংয়ে বেশি ভুগছেন গ্রামের মানুষ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা থাকায় রাজশাহী, নীলফামারী, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গায় লোডশেডিং ভোগান্তিতে ছিলেন। মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ার পরও লোডশেডিং যেন না হয়, সেদিকে বিদ্যুৎ বিভাগকে নজর রাখতে হবে।