ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল

ভুয়া বিল ভাউচারে কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ

ভুয়া বিল ভাউচারে কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে পণ্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়েছে সাত কর্মকর্তাকে। কিন্তু এ ঘটনার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে তদন্ত চলছে ঢিমেতালে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সঠিক ও সময়মতো তদন্ত না হলে দুর্নীতিবাজরা আড়ালে থেকে যাবে। এতে রেলওয়ে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলীতে অবস্থিত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে আলোচিত কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলছে তোলপাড়। অভিযোগ রয়েছে, পণ্য কেনার জন্য কোনো ধরনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। কেনাকাটা হয়নি কোনো পণ্য। অথচ পণ্য কেনাকাটা হয়েছে বলে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা এখন মুখে মুখে। টেন্ডার ছাড়া ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জানাজানির পর পূর্বাঞ্চল রেলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব এবং অডিট শাখার ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান বলেন, সাত কর্মকর্তাকে বরখাস্তের পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কাজ অব্যাহত আছে। দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক তদন্তে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত কর্মকর্তারা হলেন হিসাব কর্মকর্তা (এমটিএ) মামুন হোসেন, হিসাব কর্মকর্তা (প্রশাসন টিএ) মো. আবু নাছের, হিসাবরক্ষক শিমুল বেগম, হিসাব রক্ষক (প্রশাসন ও সংস্থাপন) সৈয়দ সাইফুর রহমান, অডিটর (ডিএফএ পদ্ধতি) পবন কুমার পালিত, জুনিয়র অডিটর (ডিএফএ) ইকবাল মো. রেজাউল করিম এবং অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমান। ভুয়া বিল ভুয়া বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশের পর কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যায়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, পাহাড়তলী স্টোরস শাখা থেকে কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। কেনা হয়নি কোনো পণ্যও। বিল পরিশোধ করার জন্য দেয়া হয়নি কোনো চিঠি। সম্পূর্ণ ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে হিসাব ও অডিট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে রেলওয়ের নাবিল আহসান চৌধুরীর কসমোপলিটন করপোরেশন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লায়ার)। যাচাই বাছাই, চেক হস্তান্তর, ব্যাংকে জমাদান এবং উত্তোলনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তর (এফএঅ্যান্ডসিএও)। এসব ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রেলওয়ের হিসাব ও অডিট শাখার কয়েকজনসহ একটি প্রতারক চক্র জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে শনাক্ত করেছে রেলওয়ের হিসাব বিভাগ। আর এ কাজে রেলের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যাংকের কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সবগুলো বিষয় সামনে রেখেইে চলছে তদন্ত।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান বলেন, টাকা উত্তোলনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা (ডিএফএ) জয়শ্রী মজুমদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছি। তবে এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। যে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেটি হচ্ছে আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংক। তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। তদন্ত কমিটি আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংকে গিয়েছিল। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ছাড়া কোনো তথ্য দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। আমরা গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে (কারা সীমান্ত ব্যাংকে হিসেব খুলেছে) চিঠি লিখেছি। প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দুইজন অফিসার, দুইজন অ্যাকাউন্টেন্ট, দুইজন অডিটর এবং একজন এমএলএসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, কসমোপলিটন করপোরেশনের চারটি বিল ছিল, সেখানে একটি বিলের বিপরীতে দুইবার অর্থ ছাড় নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন। কসমোপলিটন কর্পোরেশনের মালিক দাবি করছেন বিলটি তারা দেননি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংকে কারা অ্যাকাউন্ট খুলেছে, কারা চেক জমা করেছে, কারা টাকাগুলো উত্তোলন করেছে, সেই তথ্য চেয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি টাকা ছাড়ের আগে ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোন দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই বিষয়টিও আমরা দেখছি। কসমোপলিটন কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে আমার অফিসের কেউ জড়িত নেই। এই প্রক্রিয়ার সাথে হিসাব শাখা, অডিট শাখা, স্টোরস এবং ডেসপাস শাখার কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে সব ধরনের কেনাকাটা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে করা হয়। রেলওয়ের সব বিভাগ তাদের চাহিদা পাঠানোর পর পণ্য ক্রয় করে স্টোরে জমা রাখা হয়।

সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বিল পাঠানো হয় বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে এফএঅ্যান্ডসিএও অনুমোদনের পর চেক ইস্যু করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত