ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এমপি-নেতাদের মন জয়ে তৎপর প্রার্থীরা

এমপি-নেতাদের মন জয়ে তৎপর প্রার্থীরা

জাতীয় নির্বাচনের রেশ না কাটতেই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণায় ভোটের লড়াই জমিয়ে তুলছে দলটি। উপজেলার ভোটেও বিএনপি না আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণায় আওয়ামী লীগের অনেকেই এবার উপজেলা পরিষদের ভোটে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। এ কারণে প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বর্তমান উপজেলার পরিষদের নির্বাচিতরাও ফের প্রার্থী হবেন। যারা এমপি পদে লড়তে গিয়ে উপজেলা থেকে পদত্যাগ করেছেন তারাও প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমেও প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। আবার অনেকে প্রার্থিতার কথা প্রকাশ্যে না আনলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।

ভোটের কয়েক মাস বাকি থাকতেই স্থানীয় এমপি, কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের মন জয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন উপজেলার প্রার্থীরা। নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের পাল্লাভারি করতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এজন্য আগেভাবেই দৌড়ঝাঁপ করছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা। ছুটছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা এবং অফিসে। ধরনা দিচ্ছেন স্থানীয় এমপিদের কাছেও। চাচ্ছেন দোয়া-আশীর্বাদ ও নিজের পক্ষে সমর্থন। বিভিন্ন দিবস ও উৎসবকে কেন্দ্র করে সামজিকমাধ্যমে এমপিদের ছবি দিয়ে পোস্টার ডিজাইন করে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছে জানাচ্ছেন। যাদের সঙ্গে আগে থেকেই স্থানীয় এমপিদের সখ্যতা রয়েছে, তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে ভেড়াতে চেষ্টা-তৎবির চালাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচাতে চেষ্টা করছেন উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানরা। তবে প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে না এমপিরা। চুপিসারে পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

উপজেলার ভোট প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগেরই একমাত্র গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। বছরজুড়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে আওয়ামী লীগের। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভার নির্বাচন, জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে, সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে কাজ করে, মানুষের বাড়ি বাড়ি যায়, আলাপ-আলোচনা করে, দলের সঙ্গে তাদের একটা বন্ধন তৈরি করে। যে কোনো সময়ে নির্বাচনের ঘোষণা হলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রস্তুত।

ঢাকা-২ আসনের কিছু অংশ এবং ৩ আসনের সমন্বয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় দুটি থানা রয়েছে একটি হচ্ছে; কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আর অপরটি হলো দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ। আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থীরা এর মধ্যেই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। তারা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। কৌশলে নিজেদের প্রার্থিতার কথাও জানান দিচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদে কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মো: শাহিন আহমেদ, ভাইস-চেয়াম্যান শাহিদুল হক শাহিদ, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলতাফ হোসন বিপ্লব। ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন, সালাহ উদ্দিন লিটন, মনির হোসেন, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান রওশন ইয়াজদানী। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন, যুব মহিলা লীগের নেত্রী রেশমা জামান, বর্তমান মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান আলো বেগম, মডেল থানা মহিলা লীগের সভাপতি লতা বেগম। প্রার্থীরা সবাই নিজের মতো করে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। ঢাকা-২ এবং ঢাকা-৩ আসনের এমপির দিকেই দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে আওয়ামী লীগের আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রত্যেক প্রার্থীই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সেনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তারা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মনির হোসেন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবুও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। প্রার্থিতার কথা স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি আমার মতো করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে গণসংযোগ করছি। এমপির সঙ্গেও আমার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম জাহাঙ্গীর, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রোবায়েত হোসেন শান্ত।

বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার খ ম মশিউর রহমান লাবলু। চাকরি জীবন থেকে অবসরে গিয়েই পুরোদমে রাজনীতি করছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে পটুয়াখালীর জেলার বাউফল উপজেলা থেকে এবার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হবেন তিনি। প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলেন খ ম মশিউর রহমান লাবলু আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। এ অঞ্চলে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। আমার বাবা মরহুম ডাক্তার আব্দুল খালেক বিশ্বাস নওমালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন এবং নওমালা ইউনিয়ান পরিষদেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বিশ্বাস বর্তমানে নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জনগণের সেবার উদ্দেশ্য প্রার্থী হব। অপরাজনীতি রোধ করে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। এদিকে বর্তমান বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার পুনরায় প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত চারজন প্রার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে তারা হলেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারীও এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সুমন ও মো. রাকিব মাঝি। জানতে চাইলে আইয়ুব আলী বেপারী বলেন, এবার তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় এমপি কিংবা দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেননি। মাগুড়া জেলার মহম্মদপুর উপজেলায়ও চারজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, ডক্টর আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবি নাজনীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কবিরুজ্জামান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবি নাজনীন বলেন, এবার আমি চেয়ারম্যান পদে লড়াই করব। এরই মধ্যে ভোটে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রত্যেক প্রার্থী নিজের মতো করে ভোট করবে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উপজেলার জনগণের সঙ্গে আছি, আগামীতেও থাকব, ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ মে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট ১১ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট ১৮ মে ও চতুর্থ ধাপে আগামী ২৫ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত