দেশের আর্থিক কাঠামো সমৃদ্ধসহ বিদেশি বিনিয়োগে স্বস্তি ফেরাতে অফশোর ব্যাংকিং আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান। মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোট পাঁচ এজেন্ডা উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বিদ্যমান দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সংশোধনপূর্বক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন, রমজান মাসে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস সময়সূচি নির্ধারণ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনিবাসী ব্যক্তি বা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে অফশোর ব্যাংকিং আইনে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এরই মধ্যে যারা লাইসেন্স পেয়েছে, তাদের নতুন করে আর লাইসেন্স নিতে হবে না। মার্কিন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন এবং চাইনিজ ইয়ান- এ পাঁচ মুদ্রায় ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
মন্ত্রিসভায় নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে আসন্ন রমজান মাসে ইফতার পার্টি নিয়ে নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপচয় বন্ধ করতে রমজান মাসে সরকারিভাবে বড় ধরনের কোনো ইফতার পার্টি করা যাবে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি। ইফতারের টাকা দান করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারো এ ধরনের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা থাকলে খাদ্য কিনে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। এর মূল বার্তা হচ্ছে অপচয় যেন না করি। লোক দেখানো কার্যক্রমে যেন নিজেদের নিবেদিত না করি। খাদ্য ও অর্থের অপচয় হলে ধর্মীয় দিক থেকে কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এই আইনের আওতায় অফশোর ব্যাংকিং করার জন্য তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো লাইসেন্স গ্রহণ করবে। এরপর অনিবাসী বাংলাদেশে বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ করতে পারেব, ঋণ দিতে পারবে। ওই আমানত স্বাভাবিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবেন। বিদেশে যে বাংলাদেশি আছেন তার পক্ষে তার কোনো আত্মীয় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, সহায়তাকারী হিসেবে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঋণসীমা বেধে দেওয়া হয়নি। যে কোনো পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে। সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৮৫ সালে এটি বাংলাদেশে প্রথম ইপিজেডে শুরু হয়, সেখানে কিন্তু কারেন্ট অ্যাকাউন্টের মতো, কোনো ইন্টারেস্ট দেওয়া হয়। এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ে ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে। ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারলে, ব্যাংকের নরমাল ব্যবসার প্রয়োজনে সে যখন বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তার তুলনায় ব্যয় কম হবে। বহু দেশ এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ ও আর্থিক কাঠামো সমৃদ্ধ করেছে। তারা বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। মাহবুব হোসেন বলেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যখন টাকা জমা রাখে তখন কিন্তু টাকা নিয়ে যেতে পারমিশন নিতে হয়। অফশোর হলে স্বাধীনভাবে এটা অপারেট করা যাবে। এখানে ব্যবসা করে যারা লাভবান হবে, তারা এখানে টাকা রাখতে আগ্রহী হবে। রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের আর্থিক অবকাঠামো লাভবানের জন্য এটি করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে অনেক দেশ সুফল পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, সেভিং অ্যাকাউন্ট যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবেই এ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। ওই অ্যাকাউন্টে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা জমা দেওয়া যাবে।