ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে এবার ধ্বংস করা হচ্ছে ৮২ বিলাসবহুল বিকল গাড়ি

চট্টগ্রামে এবার ধ্বংস করা হচ্ছে ৮২ বিলাসবহুল বিকল গাড়ি

এবার খালাস আটকে থাকা নিলামযোগ্য ৮২ বিলাসবহুল গাড়ি ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এসব গাড়ি কারিগরিভাবে চলাচলে অযোগ্য হওয়ায় ধ্বংস করা ছাড়া বিকল্প ছিল না বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে গাড়িগুলো চলাচল অনুপযোগী বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এরপর ধ্বংসের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। গাড়ি আমদানিকারকরা বলছেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর বেশিরভাগ চট্টগ্রামবন্দরে আনা হয় কারনেট সুবিধায়। এসব ছাড় না করায় বছরের পর বছর পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় বন্দরে গাড়ির শেডেই।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা গাড়িসহ সব ধরনের পণ্য নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করা না হলে নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। এ ধরনের পণ্যগুলো নিলামে তোলার দিনক্ষণও ঘোষণা করা হয়। শেষ মুহূর্তে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি নিয়ে যাওয়ার পর নিলাম বন্ধ হয়ে যায়। কারনেট সুবিধায় গাড়ি আমদানি ও শুল্ক কর ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটনসহ নানা বিষয় ধরা পড়ার পর নিলাম দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে। নিলামের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলেও আমদানিকারকরা আর নিতে চান না। এসব পণ্যের মধ্যে পচনশীল পণ্য থেকে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড (একবার ব্যবহৃত) গাড়িও রয়েছে। নিলাম আয়োজনে ব্যর্থ হওয়া ও আমদানিকারকদের পণ্য ছাড়ে ব্যর্থতার দায় এড়াতে ডাম্পিং ইয়ার্ডে পণ্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নগরীর হালিশহর এলাকায় নির্ধারিত ডাম্পিং ইয়ার্ডে নষ্ট পণ্য গাড়ি ধ্বংসের উদ্যোগ নেন। এবার সেই ৮২ গাড়ি ডাম্পিং ইয়ার্ডেই ধ্বংস করা হবে বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস অ্যান্ড ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, কারনেট সুবিধায় আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়িগুলোই মূলত ছাড় করার জটিলতায় পড়েছে। এসব গাড়ি বিদেশ থেকে বিশেষ সুবিধায় বন্দরে নিয়ে আসার পর আবার বিদেশে ফেরত নেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু যারা কারনেট সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দরে বিলাসবহুল গাড়ি এনেছেন তাদের অনেকেই দেশে বিক্রি করে দেন। এসব গাড়ি ছাড় করতে দেখা দেয় আইনি জটিলতা। এরপর বছরের পর বছর গাড়িগুলো বন্দরের শেডে পড়ে থেকে নষ্ট হয়।

চট্টগ্রামবন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে নিলাম ইয়ার্ডে সব সময় গাড়ি থাকে ১ হাজার ইউনিট কিংবা ১ হাজার ২০০ ইউনিট। ৪ হাজার ধারণক্ষমতার গাড়ির চার শেডে কখনো এর চেয়ে বেশি গাড়ি থাকে না। আবার ১ হাজার গাড়ির মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ গাড়ি থাকে নিলাম ইয়ার্ডে। আমদানি করা নতুন পুরোনো গাড়ির অর্ধেক থাকে নিলাম ইয়ার্ডে। এর একমাত্র কারণ আমদানিকাররা সময়মতো গাড়ি ছাড় করে না। আর ছাড় না করা গাড়ি নিলাম ইয়ার্ডে রাখা ছাড়া বিকল্প নেই। নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যই নিলাম ইয়ার্ডে রাখা হয়।

গাড়ির চার শেডে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আছে অন্তত তিন থেকে চার বছর ধরে। কোনো কোনো গাড়ি ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে না ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত। এ ধরনের পুরোনো বিকল গাড়ি থেকে ১২১টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কাস্টম। তবে প্রাথমিকভাবে ৮২টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি গাড়িগুলো নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সেই গাড়িগুলো ধ্বংস করা হবে ভারী যন্ত্র দিয়ে। হালিশহরের ডাম্পিং ইয়ার্ডেই তা করা হবে। তবে কিছু কিছু আমদানিকারক ধ্বংসের জন্য বাছাই করা গাড়িগুলো পার্টস আলাদা করে কেটে বিক্রি করার মতামত জানিয়েছেন। কেউ কেউ কাস্টমসের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে। কাস্টমসের নিলাম শাখার সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরোনো গাড়িগুলো কোনোভাবে সচল করার সুযোগ থাকলে নিলামে তোলা যায়। কিন্তু একেবারে বিকল কিংবা নষ্ট হলে নিলামেও তোলা যায় না। এসব গাড়ি কেনার তো কেউ থাকে না। তাই বন্দরের ভরাট অকশান শেড খালি করা এবং পুরোনো জঞ্জাল মুক্ত করতে ধ্বংস ছাড়া বিকল্প নেই।

কারনেট সুবিধা নিয়ে যত বিতর্ক : দেশে আমদানি করা গাড়ি বেশিরভাগ জাপান থেকে আমদানি করা। আমদানিকারকরা ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলে এসব গাড়ি আমদানি করেন। কিছু কিছু বিলাসবহুল গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয় বিশেষ সুবিধায়। এসব গাড়ি আনতে ব্যাংকে এলসি খোলা কিংবা আমদানি করা গাড়ির সমান শুল্ক পরিশোধের প্রয়োজন পড়ে না। অত্যন্ত সুবিধজনক অবস্থায় বিদেশ থেকে গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়, দেশে অবস্থানকালীন সময়ে ব্যবহার করার জন্য। তাও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কাস্টমসের এই পদ্ধতিটাই কারনেট সুবিধা হিসাবে পরিচিত। কারনেট সুবিধার এসব গাড়ির ক্ষেত্রে শর্ত থাকে বিদেশে চলে যাওয়ার সময় গাড়িগুলো ফেরত নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দেশে উচ্চ শুল্ক হার কৌশলে এড়িয়ে বিদেশ থেকে গাড়ি নিয়ে এসে দেশেই বিক্রি করে দেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এই সুবিধায় আনা গাড়িগুলো ছাড় করতে জটিলতা দেখা দেয়ায় বন্দরেই পড়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের এটাকে অনেকেই বিলাসবহুল গাড়ি নষ্টের জন্য কারনেট সুবিধার কুফল হিসাবে মনে করেন।

কারা কারনেট সুবিধা বেশি নেয় : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্কমুক্ত সুবিধায় পর্যটক গাড়ি আনার সুবিধা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ‘কারনেট দ্য পেসেজ’ সুবিধা নেন কিছু কিছু পর্যটক। এসব গাড়ি শুল্কমুক্তভাবেই দেশের বন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন পর্যটকরা। এই সুবিধায় নিয়ে আসা হয় হ্যামার, বিএমডব্লিউ, পোরশে, মার্সিডিজ বেঞ্জসহ উচ্চ শুল্ক হারের বিলাসবহুল গাড়ি। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সব ধরনের পর্যটক এই সুবিধা নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন সময় কারনেট সুবিধার গাড়ি যাচাইয়ে দেখা যায় ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশিরা বেশি নিয়ে এসেছেন দেশে। তারা কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যান না। বিআরটিএ’র মাধ্যমে কৌশলে জাল কাগজপত্র তৈরি করে দেশেই বিক্রি করে দেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি চক্র সক্রিয় ছিল। তবে বর্তমানে চক্রের কেউ তেমন সক্রিয় নন। তাই সাম্প্রতিক সময়ে কারনেট সুবিধার কোনো গাড়ি বন্দরে আনা হয়নি। যেগুলো পড়ে আছে তা অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর আগে নিয়ে আসা গাড়ি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত