ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজানের আগে খেজুরের দাম

আমিরাতে কমল ৪০ শতাংশ বাংলাদেশে বাড়ল তিন গুণ

আমিরাতে কমল ৪০ শতাংশ বাংলাদেশে বাড়ল তিন গুণ

পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। রমজানে অন্য যে কোনো পণ্য ভোগের বিলাসিতা না হয় বাদই দিলাম, তবে খেজুরের বিষয়টি অনেকটাই ভিন্ন। আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। সেই ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম বিশ্বের মানুষ খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করেন। তাই ইফতারে দুই-একটা খেজুর থাকলে রোজাদারের মন প্রফুল্ল থাকে। নিজেকে সুন্নতের তাঁবেদার বলে মনে হয়। আসন্ন রমজানে আমাদের দেশের কতজন রোজাদারের ইফতারের থালায় এবার খেজুর থাকবে, সেই হিসাবটা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমাদের দেশে ১১০ টাকার খেজুর আমদানিতে ১৪০ টাকা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে খেজুরের দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে। এই ধরনের খবর পড়তে না পড়তে আরেকটি খবর মানুষের উত্তপ্ত চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। আর সেটি হলো রমজান উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেজুরের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। শুধু খেজুর নয়, রমজান উপলক্ষ্যে ৭০টিরও বেশি পণ্যের দাম কমেছে দেশটিতে।

আমরা বাংলাদেশে বসে সুমিষ্ট ও উপাদেয় এই পুষ্টিকর ফল হয়তো সেভাবে খেতে পারব না। তবে ওই দেশটিতে বসবাসকারী মুসলমান ভাইয়েরা রমজান মাসে কম দামে খেজুর দিয়ে ইফতার করবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলমান ভাইদের মহান আল্লাহ পাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর আমরা যারা বাংলাদেশ বসবাস করছি তাদের মন বেদনার কোনো কিছু নেই। কেন না, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে জন্মগ্রহণ করিনি। মহান আল্লাহর দরবারে এজন্য আফসোস করারও কিছু নেই। কাল কিয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহ যদি বাংলাদেশের মুসলমানদের কবুল করেন, তাহলে সেটাই হবে আমাদের জন্য বড় নেয়ামত।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেজুরের দাম ৪০ শতাংশ কমানোর খরব প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসে। আর তার আগের দিন বাংলাদেশে খেজুরের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার খবর জানান হয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসির এক মতবিনিময় সভা থেকে। খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- পবিত্র রমজান মাস আসতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি এবং এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় সব খেজুরই বর্তমানে আরব আমিরাতে প্রায় ৪০ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, বর্তমানে ফিলিস্তিন, জর্ডান এবং সৌদি আরবের মাজদুল খেজুর প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২০ দিরহামে। মাত্র কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি এই খেজুরের দাম ছিল ৩০ দিরহাম। একইভাবে, রুটাব খেজুর সাধারণত ৬০ দিরহামে ৩ কেজি কিনতে পাওয়া গেলেও এখন রমজানের আগে ওই একই পরিমাণ খেজুরের দাম কমে ৪৫ দিরহামে নেমে এসেছে। আজওয়া খেজুরের দাম এখন প্রতি কেজি ৩৫ দিরহাম, যা এই খেজুরের আগের দাম ৪৫ দিরহাম থেকে কম। আর বাজেট-সচেতন ক্রেতারা সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ইরান থেকে আসা জাইদি খেজুর কিনতে পারছেন। কেজিপ্রতি ৫ দিরহামে এই খেজুর কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে আরব আমিরাতের বাজারে ৩০টিরও বেশি জাতের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আরো বিভিন্ন জাতের খেজুর আসবে।

উল্লেখ্য, রমজান মাসে খেজুর খাওয়ার বিশেষ এবং প্রধান কয়েকটি তাৎপর্য রয়েছে। মূলত খেজুর ইফতারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঐতিহ্যগতভাবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতেন।

এছাড়া মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদারদের শরীরে দ্রুত শক্তিও বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পূরণ করতে সাহায্য করে।

এদিকে বাংলাদেশে উচ্চ শুল্কের কারণে খেজুরের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। উচ্চ শুল্ক না থাকলে অনেক কম দামে খেজুর বিক্রি করা যেত জানিয়ে তিনি বলেন, যারা শুল্ক নির্ধারণ করেন তাদের কোনো দায় হয় না। দায় হয় সরকারের অথবা ব্যবসায়ীদের। ১১০ টাকা কেজি দরে খেজুর আমদানি করে শুল্ক দিতে হয় ১৪০ টাকা। বাজারে তা বিক্রি করতে হয় ২৫০ টাকায়। এ কারণেই খেজুরের দাম এত বেশি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে। অথচ এর আগের অর্থবছরে ১ কেজি খেজুরে মাত্র ১০ টাকা শুল্ক দিয়েছি। গত বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন খেজুর ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৩৫ বছর ধরে খেজুর আমদানি করি, কখনো শুল্ক দিতে হয়নি। আমি এখন খেজুর আমদানি করলাম ৯০০ থেকে ১ হাজার মার্কিন ডলারে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার সাধারণ কনটেইনার খেজুরের জন্য ২ হাজার ৫০০ ডলার এবং হিমায়িত কনটেইনারে খেজুরের জন্য ৪ হাজার ডলার শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এতে খেজুরের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত