ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৩১ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

পাকিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অনুরোধ

পাকিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অনুরোধ

সাধারণ নির্বাচনের ২১ দিন পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনে ব্যাপক হট্টগোল আর বিক্ষোভের মাঝে শপথ নিয়েছেন পার্লামেন্টের নতুন সদস্যরা। দুই-এক দিনের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে নতুন প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচন হয়ে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে বেশ উদ্বেগজনক খবরই পেয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে মার্কিন কংগ্রেসের ৩১ জন সদস্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখেছেন। একই চিঠি তারা লিখেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকেও।

গতকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে লেখা একটি চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসের ৩১ জন সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। এতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও জালিয়াতির তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

পাকিস্তানের ভোটাররা গত মাসে নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। তবে নির্বাচনের দিনে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি ভোট ঘনিয়ে আসার আগে গ্রেপ্তার এবং সহিংসতার বৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিকভাবে বিলম্বিত ফলাফলের কারণে ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে নির্বাচনি অনিয়ম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তদন্তের আহ্বান জানায়।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নির্বাচনের পর জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে। যদিও কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করেছেন।

ইমরান খান-সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৩টি আসন জিতেছেন, কিন্তু এরপরও সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। পরে তিনি এবং তার দল ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন।

এই পরিস্থিতিতে ৭৯ আসন পাওয়া পিএমএল-এন এবং ৫৪টি আসনে জয় পাওয়া পিপিপির জোটবদ্ধ একত্রিত সংখ্যা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে এবং সরকার গঠনের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। যদিও জোটের মধ্যে ছোট কিছু দলও রয়েছে।

গত বুধবার লেখা ওই চিঠিটিতে নির্বাচনি অনিয়ম ও হস্তক্ষেপের অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকারের স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে অনুরোধ করেছেন আইনপ্রণেতারা।

একইসঙ্গে রাজনৈতিক বক্তৃতা বা কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য যাদের আটক করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের এই ধরনের মামলার তথ্য সংগ্রহ করার এবং তাদের মুক্তির পক্ষে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

চিঠিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে একটি কথা স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আর তা হচ্ছে, যদি প্রাসঙ্গিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে ওয়াশিংটন তার সামরিক ও অন্যান্য সহযোগিতা স্থগিতের মতো পদক্ষেপকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে।

মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৩১ জন ডেমোক্র্যাটিক সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রতিনিধি গ্রেগ ক্যাসার এবং সুসান ওয়াইল্ড। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পাল, রাশিদা তালাইব, রো খান্না, জেমি রাসকিন, ইলহান ওমর, কোরি বুশ এবং বারবারা লির মতো আইনপ্রণেতারাও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পরে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। যদিও সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার কথা বরাবরই অস্বীকার করে থাকে। ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতেছিল। ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়। এর মাধ্যমে ইমরানকে প্রার্থী হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং তাকে দীর্ঘ কারাবাসের শাস্তিও দেওয়া হয়।

যদিও কোনো ধরনের অন্যায় কাজে জড়িত থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করেছেন বিশ্ব কাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত