ইভিএমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

প্রকল্প বাঁচাতে চেষ্টার কমতি নেই ইসির

পুড়িয়ে ফেলা হবে নষ্ট ইভিএম

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালটে অনুষ্ঠিত হলেও এবার প্রকল্প বাঁচাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সরকারর নতুন প্রকল্প না দেওয়ায় পুরোনো প্রকল্পের ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণ করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় সিটি করর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি। ইভিএমে সূষ্ঠু ভোট করে ইসি দেখে দিতে চায় এ যন্ত্রে সূষ্ঠু ভোট করা সব সময় সম্ভব। আগামীতে সরকার নতুন প্রকল্প দিলে ইসি বড় আকারে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তা একেবারেই অসম্ভব। ইভিএমে ভোটে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অন্য কোন অনিয়ম হলেও ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

প্রার্থীদের সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএমে অনিয়ম একেবারেই অসম্ভব; এটা বিজ্ঞানের বিষয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের প্রতীকে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তাই হতো, তাহলে বিগত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য প্রার্থীরা জয়ী হতো না। ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা ভোটারদের জানাতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এমনকি নির্বাচনের দিন ভোটারদের লাইনেও বিষয়টি নিয়ে ধারণা দেওয়া হবে।

সব জায়গায় ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে শুধু ময়মনসিংহ নয়, এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আঙুলের ছাপে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। সেজন্য সঠিক ভোটার নিশ্চিত হলে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোট কথা ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই; বরং ভোটার উপস্থিতিই আসল বিষয়।

এদিকে হাজার কোটি টাকার অকেজো ইভিএম ব্যবহার উপযোগী করতে না পেরে পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বধীন ইসি। এক্ষেত্রে প্রায় ৮ বছর আগের কাজী রকিবউদ্দীন কমিশনের পথেই হাঁটছেন এরাও।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলে উন্নত মানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত রেখে যায়।

২০১৬ সালে পরবর্তী কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম তৈরি করে নেয়।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়। এতে মেশিনপ্রতি ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

প্রকল্প থেকে দেড় লাখের মতো ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। তবে সেই উন্নত মানে ইভিএম ৫ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে পড়ে। অবশিষ্ট ১ লাখ ১০ হাজারের মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য নেই নতুন কোনো প্রকল্পের অর্থের জোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। সেই শঙ্কাই এখন সত্য হতে চলেছে। কেন না, অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে নষ্ট ইভিএমগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে ইসি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে কার্যবিবরণী বলছে, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম কোয়ালিটি চেক (কিউসি) করে অকেজো ইভিএম সংখ্যা নির্ধারণের জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দিয়েছেন। বর্তমানে সেই কাজ চলছে। কিউসি শেষ হলেই বাস্তবায়ন করা হবে সিদ্ধান্ত।