ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন

রমজানে ভোক্তারা যেন হয়রানির শিকার না হয় : প্রধানমন্ত্রী

ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড নিশ্চিত করুন
রমজানে ভোক্তারা যেন হয়রানির শিকার না হয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে বাজার পরিস্থিতি কেমন। কিছু কিছু ব্যবসায়ী থাকে রমজান মাসে পণ্য মজুত করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চার দিনব্যাপী ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও যেন ভোক্তাদের হয়রানি হতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশে পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। খাদ্যে ভেজাল দেয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রোজা আসলেই এই সমস্যাগুলো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেয়া একান্তভাবে দরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং কোভিড অতিমারির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন এমন দেশ রয়েছে যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশে রয়েছে। বাংলাদেশও এর থেকে দূরে নয়; যদিও বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের নিচে আছে। কিন্তু তারপরও এটা একটা সমস্যা রয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালে আমরা জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে অনেকগুলো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমি সব জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই, নির্বাচনের আগে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, আপনারা সঠিকভাবে সেটি পালন করেছেন। আমরাই প্রথম আইন তৈরি করে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। একইসঙ্গে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন আমি দেখেছি; অনেক নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছি, কীভাবে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে আমি দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু এবং অবাধ, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে অনেকেই নির্বাচন চায়নি। অনেকেই চেয়েছে দেশে অনির্বাচিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আবার সৃষ্টি হোক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দীর্ঘ ২১ বছর এদেশের মানুষ যে কষ্ট ভোগ করেছে, আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত; আবার সেই পরিস্থিতি যেন আসে। তাদের কাছে নির্বাচনটা পছন্দ নাও হতে পারে। কারণ নির্বাচন তাদের মন মতো হয়নি। কিন্তু নির্বাচনে সাধারণ মানুষ একদম গ্রাম পর্যায়ের মহিলা এবং তরুণ ভোটারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। তারা যে সঠিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে এর সব কৃতিত্ব আপনাদেরই (ডিসি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এবং এগুলো কতটুকু স্থানীয় জনগণের কাজে আসবে সে বিষয়ে প্রয়োজনে আমাকে সরাসরি রিপোর্ট দেবেন। শুধু নাম কা ওয়াস্তে প্রকল্প যেন না করা হয় সে বিষয়ে তিনি সবাইকে পুনরায় সচেতন করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, স্মারক এবং গণকবর সংরক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও তিনি ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, এখন বড় কিছু সমস্যা আছে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখি। পড়ালেখা করা ছেলে-মেয়েরা কেন এসবে জড়াবে? এটা সবার দেখতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সবাইকে নজরদারি বাড়াতে হবে। ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় কি না, নজরদারি বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। (কিশোরদের) গ্রেফতার করে লাভ নেই। গ্রেফতার করলে অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরও খারাপ হয়ে যাবে। গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের নিয়ে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যেন কারো ছেলে মেয়ে এ ধরনের কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে। যত বেশি ছেলে-মেয়েদের খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে তত বেশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকসহ তাদের মাঝে বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।

এ সময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেনো সঠিক মানুষরা সুফল পায় সেটি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। গতানুগতিক শিক্ষার বদলে কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদিও ভালো কাজে প্রথম দিকে অনেকেই সমালোচনা করেন। কিন্তু পরে এর সুফল পেলে সমালোচনা থেমে যায়। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে তরুণদের মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের থেকে মুক্ত করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোনো মতেই যেনো তিন ফসলি জমি নষ্ট না হয়। চাষাবাদের জমি নষ্ট করা যাবে না। সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার। বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি তৈরি করতে হবে, থাকতে হবে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এগুলো রেখেই নির্মাণ করতে হবে। বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না তা সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জনগণের অর্থেই সবাই চলে, জেলা প্রশাসকদের এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা করাই কর্তব্য। জনগণের সেবার বিষষয়টি মাথায় রেখে সব কাজ করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি মানেই ক্ষমতা ভোগ করার জন্য আছি এমন না। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’ এই জনগণের অর্থেই তো আপনারাও চলেন, আর আমরা যারা এখন মন্ত্রি ও প্রধানমন্ত্রী তারাও চলি। কাজেই জনগণের সেবা করাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাদের সেবা করতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই সব কাজ আমাদের হাতে নিতে হবে এবং সম্পন্ন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির মধ্যে পরশ্রীকাতরতা বেশি। অহেতুক সমালোচনা হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না আমি। সমালোচকরা শুধু তাৎক্ষণিক সুবিধার কথা চিন্তা করে। জনগণের কল্যাণ আমাদের চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না। কে কি বলল সেটি শুনে কাজ করবেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। যেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে এনেছে এবং ২০২৬ সাল থেকে সে যাত্রা শুরু হবে। তখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে সুবিধাগুলো আমরা পাব সেটা যেমন আমরা কাজে লাগাব তার সাথে সাথে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো মোকাবিলা করার প্রস্তুতি আমাদের এখন থেকে নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা এবং সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সূচনা বক্তব্যে শুরু হওয়া সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত