বেইলি রোড ট্রাজেডি

বাবা-মায়ের পাশে চিরশায়িত ছোট্ট মেয়ে জামিরা

জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

রাজধানীর বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শিকার শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী-কন্যার পৃথক নামাজে জানাজার শেষে একই সারিতে চিরশায়িত করা হয়েছে। জীবিতকালে তোলা ছবির মতোই, বাবা মায়ের পাশেই ছোট কবরে শুয়ে আছে একমাত্র মেয়ে জামিরা। গতকাল বেলা ১১টায় কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সঙ্গে বাবা-কন্যার জানাজা হয়। এর আগে শনিবার রাতে শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালালের স্ত্রী মেহেরুন নিসার নামাজে জানাজা রামুতে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তিনজনকেই নিহত শাহজাললের পারিবারিক কবরস্থানে তাদের সমাহিত করা হয়েছে। জানাজায় সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জানাজা পূর্বে নিহতদের জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, উখিয়া উপজেলা পরিষদের প্রথম সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মাহমুদুল হক চৌধুরী, নিহত শাহ জালালের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, উখিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিন, শ্বশুর রামুর ফুতেখাঁরকুল ইউনিয়নের শ্রীকুল গ্রামের বাসিন্দা মুক্তার আলম হেলালি, ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী, মৌলানা আবুল ফজল, নিহতের বড় ভাই হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জাহান সাজুসহ স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করে স্মৃতিচারণ করেন উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন।

এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে- কোন বাবা-মায়ের কোল এভাবে যেন আর খালি না হয়। সরকারকে এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবার অনুরোধ জানান বক্তারা।

জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় একে একে শায়িত করা হয় শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল, তার স্ত্রী মেহেরুন নিসা ও একমাত্র আদরের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে। শনিবার রাতে তাদের মরদেহ এলাকায় পৌঁছার খবর পেয়ে তাদের দেখতে রাতে এবং সকালে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। এ সময় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে স্বজনদের আহাজারি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষও। ব্যথিত হৃদয়ে ক্ষণজন্মা শাহ জালাল ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চির বিদায় দেন সবাই।

শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৭)। স্ত্রী মেহেরুন নিসা (২৪) ও একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে (৪) নিয়ে থাকতেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাস্টমস কোয়ার্টারে। কক্সবাজারে বাড়িতে আসার জন্য ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বাড়ির পথে রওনা হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় যান। আগুনে পুড়ে সেখানেই তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এতে জীবিত অবস্থার পরিবর্তে স্ত্রী-সন্তানসহ নিথর দেহে কক্সবাজারে ফিরেছেন তিনি।

এদিকে ছেলে শাহজালালসহ আদরের নাতনি ও পূত্রবধূকে হারিয়ে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম অনেকটাই বাকরুদ্ধ। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ছেলের শোকে কাতর। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতের প্রতিবেশী মরিচ্যাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম. জহিরুল হকের পরিচালনায় নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন নিহতের মামা মৌলানা ফরিদ উদ্দিন।

জানাজায় এসে বদির ১৫ লাখ টাকার অনুদান : নিহত কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিনের নামাজে জানাজায় এসে স্থানীয় দুই মসজিদের উন্নয়নকাজের জন্য ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।

তার ব্যক্তিগত সহকারী তৌহিদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়নকাজের জন্য ৫ লাখ ও মরিচ্যা গরুবাজারের সোলতানিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার উন্নয়নকাজের জন্য ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে। সহসাই প্রতিশ্রুতি দেয়া মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।