রমজানে পানির সংকট থাকছে না রাজধানীতে

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

বাড়ছে গরম, বাড়ছে খাবার পানির চাহিদা। আর আসন্ন রমজানে বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে পরিকল্পনা করেছে দেশের একমাত্র বৃহত্তম পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা। জানা গেছে, ইসলামি দেশগুলো আগামী ১০ মার্চ পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার প্রস্তুতি নিয়েছে। এর ফলে অনেক দেশে ১১ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হতে পারে। সেই হিসেবে রমজান মাসে পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে চায় ঢাকা ওয়াসা। রমজানের প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি পানির চাহিদা থাকবে, এমন টার্গেটও রেখেছে সংস্থাটি।

জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৯১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা রাখেন ও বাড়তি নামাজ আদায় করে থাকেন। এ কারণে রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।

ঢাকা ওয়াসার তথ্যমতে, শীত ও বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর পানির চাহিদা থাকে ২১০ থেকে ২১৫ কোটি লিটার। আর খরার মৌসুমে পানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। তবে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ২৯০ কোটি লিটার। সুতরাং রমজানে পানির কোনো সংকট হবে না।

সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এবারের রমজানে ঢাকা ওয়াসার সব পানি শোধনাগার ও পানির পাম্প নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে জনসমাগম স্থান, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ সব জোনের বিভিন্ন স্থানে ইফতার ও সেহরির সময় প্লাস্টিক ট্যাংক, ট্রলি স্থাপন করে পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া মসজিদে পানি সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা ওয়াসায় ৪৮টি পানির গাড়ি এবং ১৭টি ট্রাক্টর প্রস্তুত থাকবে। গরমের মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে রেখেছে ঢাকা ওয়াসা। সেজন্য স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সোর্স হিসেবে ৩৮০টি ফিক্সড জেনারেটর এবং ১৯টি মোবাইল জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অভিযোগ গ্রহণের জন্য ‘ওয়াসা লিংক-১৬১৬২’ এবং ১১টি অভিযোগ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। মডস জোনের পানির পাম্প মনিটরিং করতে বিদ্যমান ১০টি অ্যাডভাইজরি ও মনিটরিং টিম তৎপর থাকবে।

ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতের মৌসুমে পানির চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এবার গরমের মৌসুমে রমজান, সেজন্য পানির চাহিদা থাকবে বেশি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে পানির প্রয়োজন হয়। সেজন্য রমজানে লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ, হাই ভোল্টেজের সময়ে পানির পাম্পগুলো ডুয়েল সোর্স বিদ্যুৎ লাইন, ফিক্সড জেনারেটর, মোবাইল জেনারেটর দ্বারা চালু রাখা হবে। সব জোনাল অফিস, এসওসিতে পর্যাপ্ত পানির গাড়ি প্রস্তুত থাকবে। গাড়ির মাধ্যমে চাহিদাকৃত স্থানে দ্রুত পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে মডস জোনের বিভিন্ন সুবিধাজনক পাম্পে স্মার্ট হাইড্রেন স্থাপন করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, রমজানে ঢাকা শহরে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে অভিজ্ঞতা রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও রমজানে গ্রাহকদের কাছে শতভাগ পানি সরবরাহ করা হবে। কারণ ঢাকা ওয়াসার পুরোপুরি সিস্টেমের উন্নতি হয়েছে, সেজন্য ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহে সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তবে ছোটোখাটো সমস্যা ছাড়া শতভাগ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পানি সরবরাহে যে পদ্ধতি রয়েছে, সেসবের চেয়ে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো আছে। এই অবস্থায় আমাদের রাজস্ব আদায় শতভাগ হয়েছে।

রমজানে পানি নিয়ে আশা করি কোনো সমস্যা দেখা দেবে না এমন মন্তব্য করে ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে পানি ব্যবহারের চেয়ে রমজানে পানি ব্যবহারের প্যাট্রান কিছুটা বদলে যায়। এছাড়া গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষেত্রবিশেষে কমে যেতে পারে। কোনো কোনো সময় গভীর নলকূপ, পাম্প মোটর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজানের আগে থেকেই ঢাকা শহরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও অস্থায়ী দর্শনার্থীর উপস্থিতি বাড়ে, ফলে সাময়িকভাবে পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে পকেট সমস্যার সৃষ্টি হলেও তা মোকাবিলার জন্য ঢাকা ওয়াসা প্রস্তুত হয়েছে।

ওয়াসার গ্রাহকদের উদ্দেশে তাকসিম এ খান আরও বলেন, পবিত্র রমজানে পরিমিত পানি ব্যবহার করুন ও পানির অপচয় রোধ করুন। কারণ এবার রমজান ও খরার মৌসুম একত্রে এসেছে। রমজানে মানুষের পানি ব্যবহারের ধরনও পরিবর্তন হয়। সেজন্য নগরবাসীকে রমজান মাসে পানির অপচয় রোধে আরো সতর্ক এবং কিছুটা কম ব্যবহারের অনুরোধ করেন ঢাকা ওয়াসার এমডি।