ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ

চট্টগ্রাম মহানগরে অধিকাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরে অধিকাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ

চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েইে চলেছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ গত সোমবার এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানায় আগুনে ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে যায়। এ ঘটনা তদন্তে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীও যুক্ত হয়। গত সোমবার রাত ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এখন চলছে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে মানুষের সচেতনতা জরুরি। যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা এড়ানো না গেলে আগুনে ক্ষতি কমানো কঠিন। শুধু কারখানা নয় অসচেতনতার কারণে ঢাকার বেইলি রোডের মতো ঘটনা চট্টগ্রামেও ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলা অবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে রেস্টুরেন্টে। এসব রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। তাও এই সিলিন্ডার রাখা হয়েছে গাড়ি রাখার জায়গায় (গ্যারেজে)। রেস্টুরেন্টের ভবনগুলোতে বিকল্প সিঁড়ি নেই। গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে সিঁড়ির নিচে। এতে রেস্টুরেন্ট নয় আবাসিক এলাকার লোকজনের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলেই নেমে আসবে বিপর্যয়। চট্টগ্রাম মহানগরের অধিকাংশ ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এতে কোনো কারণে আগুন লাগলে ভবন থেকে মানুষের দ্রুত বেরিয়ে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বা সিডিএ।

সিডিএ’র কর্মকর্তারা বলেন, আমরা চাই সবাই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করুক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। বহুতল ভবনের একটিতেও অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা (ফায়ার সেফটি পস্ন্যান) মেনে চলা হয় না। ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনের মতো এখানেও যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। চট্টগ্রামের যেসব স্থাপনায় জমায়েত বেশি হয়, সেগুলো নকশা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে কি না, তদন্ত করা হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা দুর্বল। কিছু কিছু ভবনে নামমাত্র ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এতে কোনো কারণে আগুন লাগলে ভবন থেকে মানুষের দ্রুত বেরিয়ে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ফলে ঢাকার মতো প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম মহানগরে ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ভবন রয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫টি। ১০ তলার ওপরে ভবন রয়েছে ৫২৭টি। এসব ভবনের মধ্যে কী পরিমাণ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে, তার কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা কোনো সংস্থার কাছে নেই। তবে ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে ৯৩ শতাংশ ভবনের ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তিপত্র নেই। অথচ ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান আছে। ৯৭ শতাংশ ভবনের সেই ছাড়পত্র নেই। ৯৭ শতাংশ ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতের কোনো ব্যবস্থাই নেই।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের অধিকাংশ বহুতল আবাসিক ভবন ও বিপণিবিতানে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহারে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে অনেক ভবনে খোলা হয়েছে খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট। এসব কারণে ভবনগুলোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরো বেড়েছে। অন্যদিকে ছয়তলার ওপর ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী, ভবনগুলোতে বিকল্প সিঁড়ি থাকতে হবে। থাকতে হবে জরুরি বহির্গমন পথ। পর্যাপ্ত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, আলো-বাতাস প্রবাহের পরিসর। সব ইমারতে জরুরি প্রস্থান প্রদর্শনকারী দিকচিহ্ন থাকতে হবে। ২০ মিটার বা এর বেশি উচ্চতায় এক বা একাধিক তলা আছে এমন ভবনে অগ্নিনিরাপদ সিঁড়ি থাকতে হবে। জরুরি বহির্গমন পথকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, যাতে চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত হয়।

কর্মকর্তারা আরো জানান, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হলে তিন স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর নিচে হলে দুই স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এই আইন অনুযায়ী, যেকোনো বহুতল ভবন নির্মাণের আগে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর ১৫ দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে। ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বসবাস ও ছাড়পত্রের আবেদন করতে হবে। তবে এর আগে ফায়ার ফাইটিং ফোর পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনের স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমণ সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, ফায়ার কমান্ড স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ফায়ার সার্ভিস সেখানে বসবাসের জন্য ছাড়পত্র দেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত