৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন

স্মার্ট মেয়র চান ভোটাররা

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জমে উঠেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন (মসিক)। প্রার্থীরা নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের মন জয়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। নগরবাসীর মধ্যেও বিরাজ করছে নির্বাচনি উৎসব। নির্বাচনের মাঠে কাউন্সিলর পদে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা নগরবাসীরা বললেও মেয়র পদে বলছেন ভিন্ন কথা। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ও স্মার্ট সিটি গড়তে সুশিক্ষত, মার্জিত এবং স্মার্ট মেয়র চান তারা। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সদ্য বিদায়ি মেয়রের সঙ্গে গড়তে পারেননি অন্য প্রার্থীরা। আধুনিক ও টেকসই নগর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালের ৫ মে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ইকরামুল হক টিটু। নগর উন্নয়নে সেই প্রতিশ্রুতির অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে দৃশ্যমান উন্নয়নসহ ১১৭ কিলোমিটার বিসি রোড, ২৩৯ কিলোমিটার আরসিসি রোড, ১.৬১ কিলোমিটার সিসি রোড, ২৩৮ কিলোমিটার ড্রেন ১১.৩৭ কিলোমিটার পাইপ ড্রেনের কাজ এখনো চলমান। শহরের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসেবে টিটুকেই এগিয়ে থাকার কথা বলছেন ভোটাররা।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘ময়মনসিংহ সিটির বয়স সবে মাত্র ৫ বছর। এর দুই বছর গেছে করোনায়। এরপর তো বাজেট বরাদ্দণ্ডএই আছে এই নাই। আধুনিক নগর সেবার বলতে এখন যেটুকু দেখছেন সেটার পুরো কৃতিত্ব আমরা সদ্য বিদায়ি মেয়র টিটুকেই দেব। তিনি একক প্রচেষ্টায় ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করেছেন। এত অল্প সময়ে যেটুকু করেছেন আর যেটুকু চলমান আছে তাতে নগরবাসী বেশ খুশি। আমার বিশ্বাস-স্মার্ট সিটির জন্য স্মার্ট মেয়র হিসেবে তাকেই বেছে নেবেন ভোটাররা।’ ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে লড়ছেন। নির্বাচনি এলাকা ঘুরে জানা যায়, পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে প্রচার-প্রচারণা ও পোস্টারিংযে তিনজন প্রার্থীর সরব উপস্থিতি রয়েছে। তারা হলেন- সদ্যবিদায়ি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (ঘড়ি প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক) ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতী প্রতীক)।

সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু ময়মনসিংহ সদর আসনের (ময়মনসিংহ-৪) এমপি মুহিত উর রহমান শান্ত’র প্রার্থী। শান্ত ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে টিটু-শান্ত’র অবস্থান এখন বিপরীত মেরুতে।

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের কমপক্ষে চারজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু এমপি শান্তর প্রার্থী হলেও ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছেন। এমপি শান্ত তার মেয়র প্রার্থী টজু থেকে মুখ ফিরিয়ে কাউন্সিলরদের দিকে ঝুঁকছেন। মাঠের হিসেবে টিটুর জনপ্রিয়তায় মেয়র পদে টজুকে জিতিয়ে আনা সম্ভব নয় ধরে তিনি বিকল্প পথে হাটছেন। এজন্য নিজ বলয়ের ২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে অনুসারীরর কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুহিত উর রহমান শান্ত। আর এতে অনেকটাই নিঃসঙ্গ টজু। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক) স্বশিক্ষিত। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সমালোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেয়া দিয়েছে। নগরের ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা (মুদি দোকান্দার) আব্দুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নগর করতে তো সুশিক্ষিত ও স্মার্ট মেয়র লাগবে। সে হিসেবে নতুনদের কারোই এ যোগ্যতা নেই। তাই এবারও পুরোনো নগর পিতার দিকেই হাটতে হবে। ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর সহ-সভাপতি শংকর সাহা বলেন, ভোটাররা সাধারণ কোথায় ভোট দেবেন তা গোপন রাখেন কিন্তু ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে ভোটারদের অবস্থান পরিষ্কার করছেন, তারা কাকে ভোট দিবেন। এটা আমার কাছে মনে হয় সৎ ভোটারদের সৎ সাহস। প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন প্রার্থীকে কতটা যোগ্য মনে করলে এমনটা হতে পারে? আমার কাছে মনে হয় অন্যান্য প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন নাই। এজন্য সদ্য বিদায়ী মেয়রের নাম মুখে মুখে। উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে বিদায়ি মেয়র টিটুকেই ভোট দেওয়া উচিত। ময়মনসিংহ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই। বিভেদের রাজনীতিতে যাতে সিটির উন্নয়ন পুরে না যায় নগরবাসী সেদিকেও নজর রাখছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সদ্য বিদায়ী মেয়রকেই ভোটাররা এগিয়ে রাখছেন।’ জানা গেছে, বিগত ৫ বছরে অনেকটাই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন স্থান। শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড় এখন নান্দনিক ‘শাপলা স্কয়ার, নতুন বাজারে পায়রা চত্বর, র‌্যালির মোড় এখন ‘বিজয় মোড়, প্রথম শহীদ মিনার ‘স্মৃতি অমøন’। ৯২ কিলোমিটার নতুন রাস্তা এবং ৪৫ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান আছে আরো বেশ কিছু সেবামুলক কাজ। শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার উন্নতিও ঘটেছে অনেকাংশে। ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বলেন, ‘উন্নয়ন ও স্মাট সিটি চাইলে ময়মনসিংহবাসীকে ফের টিটুকেই নির্বাচিত করতে হবে। আমার সেই জোয়ার দেখতে পাচ্ছি। আমরা কোনো ভেদাভেদ চাই না। আমরা উন্নয়ন চাই। দলমত নির্বিশেষে এখানকার ভোটাররা টিটুকেই ভোট দেবেন আশা করছি। নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে সদ্যবিদায়ি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘আমার শ্রদ্ধেয় অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় নগরবাসীর জন্য যে উন্নয়ন করেছি তাতে ভোটাররা পুনরায় আমাকেই নির্বাচিত করবেন ইনশাআল্লাহ। ভোটের মাঠে আমার জন্য গণজোয়ার উঠেছে। স্মার্ট ও আধুনিক ময়মনসিংহ সিটি গড়তে ভোটাররা আমাকেই নির্বাচিত করবেন।