জাবিতে রাতভর দুই হলের সংঘর্ষ, ‘পেট্রলবোমা’ নিক্ষেপ

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জাবি প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মধ্যবর্তী দেয়াল অপসারণকে কেন্দ্র করে ওই দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় হলের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টা থেকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে রাত সাড়ে ৯টা থেকে দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এরপর রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, নিরাপত্তা শাখা এবং আশুলিয়া ও সাভার থানা পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তায় স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করা হয়। ফলে যাতায়াতে অসুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ করেন শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে দেয়াল ভাঙার দাবিতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেয়ালটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি অঙ্কনের চেষ্টা করেন শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। সে সময় শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি অঙ্কনে বাঁধা দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেয়াল ভাঙা নিয়ে দুই হলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা শহীদ রফিক-জব্বার হলের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে উভয় হলের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল ও পেট্রোলবোমা সদৃশ আগুন নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষের মধ্যেই দেয়াল ভেঙে দেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শহীদ রফিক-জব্বার হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ও নিশাত গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।

শেখ রাসেল হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তায় স্থায়ী দেয়াল নির্মাণের কারণে প্রায় এক কিলোমিটার পথ ঘুরে বটতলায় খাবার খেতে যেতে হয়। তাই আসন্ন রমজান মাসে এই ভোগান্তি কমাতে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দেয়াল ভাঙার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু দেয়ালটি যাতে ভাঙা না যায়, সে জন্য শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি আঁকা শুরু করেন।

এদিকে চার দফা দাবি জানিয়ে গত বছর দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- শহীদ রফিক-জব্বার হলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও খেলার মাঠ নির্দিষ্টকরণ, হলের সব অব্যবস্থাপনা দূর করে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সংস্কার ও হলের মসজিদে স্থায়ী ইমাম নিয়োগ, ডাইনিংয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও কমনরুমের প্রয়োজনীয় উপকরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং তাজউদ্দীন আহমদ হল ও শেখ রাসেল হলের বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা।

অন্যদিকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও শেখ রাসেল হল প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থলে আসেননি। তারা প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার বলেন, ‘একটা ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। পরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে এসেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি।’

শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে হলে আসি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’

এদিকে সংঘর্ষের জেরে গতকাল বুধবার সকালে ভাঙা দেয়ালের পাশেই এক্সাভেটর এনে গর্ত খনন করেছেন শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এদিন দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। তাদের মধ্যে, দুজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের আবাসিক ছাত্র। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সবশেষ উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে গতকাল বিকালে শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আলোচনা চলছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘দুই হলের রাস্তার মধ্যবর্তী একটি দেয়ালকে কেন্দ্র করে মূলত সংঘর্ষের শুরু। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন, তবে তাদের থামানো যাচ্ছিল না। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি।’