ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উপজেলা নির্বাচন

তৃণমূলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে তৎপর এমপিরা

* অনুগতদের বাহিরে ভাবছে না * পরিবার প্রাধ্যান্য পেলে কোণঠাসা হবে ত্যাগী-জনপ্রিয়রা
তৃণমূলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে তৎপর এমপিরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদের ভোটকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদের ভোটকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারে তৎপরতা চালাচ্ছে সংসদ সদস্যরা। এর মধ্যদিয়ে নিজেদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছেন তারা।

উপজেলা পরিষদের ভোটেরও বিএনপি আসবে না বলে জানা গেছে। এমন অবস্থায় নিজ নিজ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলার প্রার্থী স্থানীয় এমপির সমর্থন চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন এমন কাউকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সমর্থন দিচ্ছেন না তারা। কৌশলে নিজের আজ্ঞাবহদেরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সমর্থন দিচ্ছে সংসদ সদস্যরা। অনেক এমপি আবার নিজের পরিবারের সদস্যদের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী করারও চিন্তা ভাবনা করছে। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীরা। যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ- এমন যোগ্য ব্যক্তির পরিবর্তে নিজেদের অনুগত এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তির দিকেই ঝুকছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে নির্বাচনি আসন হাতছাড়া হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে তাদের। তাই তৃণমূলের রাজনীতি একক নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের যারা জেলা কমিটির নেতা ছিলেন, তাদের অনেকেই এবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। পুরো জেলাজুড়ে তাদের একটা পদচারণা রয়েছে। উপজেলায় জয় পেলে ভবিষ্যতে এমপি পদে লড়বেন বলেও কানাঘুষা রয়েছে তাদের অনুসারীদের মাঝে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় এমপিরা আগমী দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। এছাড়া যারা একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরও পুনরায় সমর্থন দিতে চাচ্ছেন না অনেক এমপি। পুরোনো ব্যক্তির পরিবর্তে নতুন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া কথা বিভিন্ন ঘরোয়া সভায় বলছেন বলে বেড়াচ্ছেন এমপিরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরপর কোনো ব্যাক্তি যদি দুইবার উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তাহলে সে এলাকায় তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে। রাজনৈতিক আধিপত্য বাড়ে, নিজস্ব বলয় তৈরি হয়। ভবিষতে সেই ব্যক্তি এমপি পদে ভোটের লড়াইয়ে সামিল হতে পারে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যদি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসেন, তাহলে ৫ বছরে তারা নিজেদের মাঠ গুছিয়ে নেবেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার চেয়ারম্যানই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারেন।

অনুগতরাও একটা সময় পল্টি দিয়ে এমপি প্রার্থী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেক এমপির। তারা দৃষ্টান্ত হিসেবে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তার একসময়ের একান্ত সচিব (পিএস) মহিউদ্দিন মহারাজরে ঘটনাটি ঘনিষ্টজনদের কাছে বলছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে নিজ একান্ত সচিব (পিএস) মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরে যান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ থেকে দেশের অন্যান্য এমপিরা সতর্ক হন এবং তৃণমূলে নিজেদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রিয়রাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন। নির্বাচনে এমপি বা ব্যক্তির প্রভাব যেন না থাকে, সেজন্য জেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা করে সমন্বয় ও সমঝোতা করতে পারে। কারণ, যেখানে কাউকে এককভাবে দায়িত্ব তো দেওয়া হয়নি। আর যেহেতু দায়িত্ব দেওয়া হয়নি ফলে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করাটা হয়তো কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে এমপির কোনো পক্ষকে ইন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু ভোটে দলীয় প্রতীক নৌকা থাকছে না। স্থানীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূল এবং অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে এমপিদেরই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। যারা কারসাজি করার চেষ্টা করবে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত