জিএম কাদেরের বাধার মুখে কাল রওশনপন্থিদের সম্মেলন

১২ অক্টোবর জিএম কাদেরপন্থিদের কাউন্সিল

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থিরা আগামীকাল জাতীয় সম্মেলন করবে। এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ বাসভবনে সভা শেষে সম্মেলনের এই তারিখ জানান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এই সম্মেলনকে ‘জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। একদিন পর ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২ মার্চ সম্মেলন করার ঘোষণা দেন রওশনপন্থিরা। পরে তারিখ পিছিয়ে ৯ মার্চ করা হয়। অপরদিকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে আগামী ১২ অক্টোবর দলের কাউন্সিলের সম্ভাব্য দিনধার্য করেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এদিকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর নির্দেশনা ও আহ্বান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিবর্গের আহ্বানে এবং জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে ঢাকায় বা অন্য কোনো স্থানে আয়োজন করা কোনো সম্মেলন, সভা, সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

জাতীয় পার্টির দু’পক্ষের কাউন্সিল ঘিরে রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। দ্বাদশ নির্বাচনে পর এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে পদচ্যুত করেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে। এরপর ৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন। কাউন্সিল সফল করতে নিয়মিত তৎপরতা চালাচ্ছেন। রওশনের সঙ্গে এরই মধ্যে হাত মিলিয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ আরো অনেকে। এদিকে, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হারিয়ে কিছুটা কোণঠাসা জিএম কাদের। রওশন এরশাদের কাউন্সিলের তোড়জোড়ের মধ্যেই জিএম কাদেরও দিয়েছেন কাউন্সিলের ঘোষণা।

একাংশের চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় কাউন্সিল বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। একের পর এক বৈঠক করছেন। সম্প্রতি রওশন এরশাদের বাসভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ জাপার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কাজী ফিরোজ রশীদ সভাপতিত্ব করেন। সভায় রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি হারিয়ে গেলে এদেশ থেকে সহনশীল রাজনীতি হারিয়ে যাবে। জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদের নামণ্ডনিশানা মুছে দেয়া হচ্ছিল তবে কালকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হবে।

অপরদিকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে আগামী ১২ অক্টোবর দলের কাউন্সিলের সম্ভাব্য দিনধার্য করেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। জিএম কাদের বলেন, কোনো বিশেষ দলকে বাঁচাতে জাতীয় পার্টি রাজনীতি করবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাবো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই সকল জেলা ও উপজেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। প্রেসিডিয়াম সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের জাতীয় পার্টি মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হবে। সকল জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন ওই সভায়। সেখানে জাতীয় পার্টির সার্বিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে। আগস্টের মধ্যে ৩ থেকে ৫ সদস্যের ছোট ছোট কমিটি করে জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। তারা দলের সাংগঠনিক শক্তি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রে একটি রিপোর্ট দেবে। আগামী আগস্টের মধ্যেই সকল জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। আগামী ১২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, কাউন্সিলের বিষয়ে বেশ আশাবাদী রওশন এরশাদপন্থিরা। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের ভরাডুবির পর প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু কাউন্সিলের ঘোষণার পর যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কাউন্সিলে চমক দেখতে পারবেন।

তবে রওশন এরশাদপন্থিদের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, এই পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় কাউন্সিল আমার ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। পাঁচবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এর মধ্যে এটিই সব থেকে উৎসাহব্যঞ্জক হতে যাচ্ছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, উনি (জিএম কাদের) নিজেই তো মূল ধারার মধ্যে নেই। মূলধারা বলতেতো এরশাদ, তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ, তার ছেলে সা’দ এরশাদ। আমার প্রশ্ন ইশতেহারে এরশাদের কোনো নাম গন্ধ নাই। মূলধারা কারা ৯ তারিখের কাউন্সিলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।

এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মাহসচিব ও সাবেক সংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দলের সব নিয়ন্ত্রণ জিএম কাদের এর বলয়েই আছে। তবে তাদের রাগ আছে, ক্ষোভ আছে। তারা মিছিল মিটিং করতেই পারেন। আমাদের সিনিয়র কিছু নেতা চলে গেছেন। তারা একত্রে থাকলে ভালো হতো। আমরা যেহেতু তুলনামূলক দুর্বল দল সেহেতু একসঙ্গে চলাটাই ভালো ছিল।