ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৬৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের আগুন

বিষাক্ত কালো চিনি মিশেছে কর্ণফুলীতে
৬৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের আগুন

এস আলম গ্রুপের সুগার মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৬৪ ঘণ্টা পর গতকাল ভোরে চট্টগ্রামের এস আলম রিফাইন্ড সুগার কারখানাটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, বিমান, সেনা ও নৌবাহিনীর ১৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো হালকা আগুন দেখা যাচ্ছে।

গতকাল বিকালের আগুন দেরিতে নিয়ন্ত্রণে আসার কারণ হলো- যে কাঁচামালগুলো ছিল সেগুলো দাহ্য। পানি দেওয়ার পরও আবার জ্বলে ওঠে। তিনি বলেন, কারখানাটিতে ১ লাখ মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল মজুত ছিল। আমরা তার ৮০ শতাংশ রক্ষা করতে পেরেছি। অগ্নিকান্ডে ফায়ার সার্ভিসের দুই সদস্য আহত হওয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। সূত্র মতে, এ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া অপরিশোধিত চিনি আশপাশের পানির সঙ্গে মিশে ‘বিষাক্ত’ তরলে রূপ নিয়েছে। কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে। আর সেই তরলে ছেয়ে গেছে আশপাশের সড়ক। সড়ক বেয়ে নালা-নর্দমা হয়ে এসব তরল যাচ্ছে পাশের খাল-নদীতে, যা পরবর্তীতে কর্ণফুলীতে মিশেছে। সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। খাল-নদীতে ভাসছে মরা মাছ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কারখানা থেকে ‘বিষাক্ত’ তরল সীমানার প্রাচীরের (দেয়াল) ফুটো দিয়ে বেয়ে পড়ছে পাশের সড়কে। আশপাশের সড়কগুলো পিচ্ছিল হয়ে পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পথচারীদের হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারাখানাকর্মীরাই সীমানাপ্রাচীরের নিচের অংশ ভেঙে ছিদ্র করে দিয়েছেন। যাতে ভেতরের পানিগুলো দ্রুত বেরিয়ে আসে। মোহাম্মদ আলাউদ্দীন নামে একজন পথচারী বলেন, কয়েকদিন আগে সকালে কারখানার দেয়ালের নিচের অংশে একাধিক ছিদ্র করে দেয়া হয়। ওই ছিদ্র দিয়ে ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত তরলগুলো বাইরে চলে আসছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে জনগণ বা পথচারীর অসুবিধা হচ্ছে। পাশের সড়কজুড়ে বিষাক্ত তরল এবং পানি ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। তবে এস আলম গ্রুপের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৩০টি ডাম্পট্রাক দিয়ে আগুনে গলে যাওয়া র-সুগার আমাদের নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি র-সুগার যাতে নদীতে না পড়ে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এরপরও ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো কিছু পানি গড়িয়ে নদীতে পড়েছে। এতে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

এদিকে, আগুন নেভাতে প্রায় ৪৭ ঘণ্টা পালাবদল করে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এতে অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। পুড়ে গলে যাওয়া অপরিশোধিত চিনির গরম তরলের কারণে কাজ করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এগুলো না সরালে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের এ কর্মকর্তা জানান, ল্যাব থেকে একটি টিম গিয়ে কারখানা থেকে বের হওয়া তরল ও নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে পুড়ে যাওয়া চিনির কাঁচামাল এবং ফায়ার সার্ভিসের পানি একসাথে হয়ে সেগুলো নদীতে যাচ্ছে। এতে নদীতে একটু ইম্পেক্ট তৈরি হবে।

নদী যেহেতু প্রবাহমান এবং জোয়ার-ভাটার নদী; এটা যখন (পানি) ডেসপার্চ হয়ে যাবে তখন আস্তে আস্তে প্রভাবটা কমে যাবে। মাছ মরে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাছ মরে যাচ্ছে এটি সত্য। ওই এলাকায় একটু অক্সিজেন সমস্যা হচ্ছে। তাই একাধিক লাইফে (মাছ) একটু ইম্পেক্ট হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি যেটা ভেতরে জমে আছে; সেটা অপসারণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ হয়তো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে লক করেছিল। এখন পানিগুলো বের হওয়ার জন্য হয়তো দেয়ালে ছিদ্র করেছে। আমাদের একটি টিম গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। আজ আরেকটি টিম যাবে পুরো বিষয়টি দেখার জন্য যাওয়ার কথা রয়েছে। আমরা অবশ্যই তাদের অবহিত করেছি বিষয়গুলো যাতে প্রপার মেনেজমেন্ট করার জন্য। তারাও জানিয়েছে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো প্রপারভাবে করছে। কারখানার বর্জ্যগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিষাক্ত পানিগুলো জনজীবনে কোনো সমস্যা করবে কি না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র-সুগার এবং পানি মিলে কালো আকার ধারণ করেছে। তবে পানিগুলো অবশ্যই দূষিত পানি। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে, জনসাধারণ যাতে হাত-পায়ে না লাগাই। তবে এটা তো মেডিকেল ইস্যু। এ বিষয়ে তেমন কিছু বলছি না। কিন্তু এই তরল বা পানি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে- এমন কোনো পদার্থ সেখানে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটার প্রতিবেদন পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৪ মার্চ) বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের এই চিনিকলের একটি গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিকাল ৪টার দিকে খবর পেয়ে শুরুতে দুটি ইউনিট, পরে আরো পাঁচটি ইউনিটসহ মোট সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় যুক্ত হয় আরো সাতটি ইউনিট। সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট কাজ করে। রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দীর্ঘ ৬৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এর আগে, গত শুক্রবার বাকলিয়া এক্সেস রোডে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন হিমাগারে আগুন লাগে। ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি আগুন নেভাতে বিকাল পেরিয়ে যায়। তবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত