জাতীয় পার্টি একাংশের জাতীয় কাউন্সিল

চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ মহাসচিব মামুনুর রশীদ

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান কাটিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) রওশনপন্থিদের দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পার্টির একাংশের নতুন চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। সেই সঙ্গে মহাসচিব হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। এতে কণ্ঠভোটে দায়িত্ব ভার দেয়া হয়। ৩ বছরের জন্য গঠিত এই কমিটিতে আরো রয়েছেন নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কো চেয়ারম্যান- সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রাহগীর আল সাদ মাহি এরশাদ, গোলাম সরোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়। কমিটি ঘোষণা শেষে কাজী মামুনুর রশীদ বেগম রওশন এরশাদের পা ছুয়ে সালাম করেন। দলটির বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়।

এর আগে বেগম রওশন এরশাদ বলেন, আজ আমার রাজনৈতিক জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। আমার গড়া প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি- এই রকম একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছে দেখে আনন্দে আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরে গেছে। আজ যদি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন।

তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ এদেশে যে নতুন ধারার ইতিবাচক রাজনীতির প্রবর্তন করেছিলেন সেই রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। আজ এই দশম সম্মেলনের মাধ্যমে পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মনে আবার আমরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে। আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এখনো টিকে আছি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর যখন একটু ঘুরে দাঁড়ালাম, তখন আমাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের আয়ত্বে রাখার জন্য আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। মাননীয় আদালতের সুবিচারে পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং আমি রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ পেয়েছিলাম। সেই লাঙ্গল প্রতীক এখনো আমাদের জাতীয় পার্টির অনুকূলে আছে এবং আগামীতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। রওশন এরশাদ বলেন, সম্মানিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা আপনাদের স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই- পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। অতীতে যারা পার্টি ছেড়ে গেছে, তারা কেউ পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যায়নি। এমনকি তারা পল্লীবন্ধুর ছবিও সাথে নেয়নি। তাই জাতীয় পার্টি কখনো ভেঙেছে- তা আমি মনে করি না।

রওশন আরো বলেন, আজ আমি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে একদা যেসব নেতাকর্মী পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তাদের সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই- আসুন আমরা সবাই জাতীয় পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হই। দেশের রাজনীতিতে একটা সুষ্ঠুধারা বজায় রাখার জন্য জাতীয় পার্টির আর কোনো বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ বাসভবনে সভা শেষে সম্মেলনের এই তারিখ জানান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে বহিষ্কার করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। একদিন পর ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২ মার্চ সম্মেলন করার ঘোষণা দেন রওশনপন্থিরা। পরে তারিখ পিছিয়ে ৯ মার্চ করা হয়। অন্যদিকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে আগামী ১২ অক্টোবর দলের কাউন্সিলের সম্ভাব্য দিন ধার্য করেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, কোনো বিশেষ দলকে বাঁচাতে জাতীয় পার্টি রাজনীতি করবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাবো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই সব জেলা ও উপজেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে।