ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লেখক শিল্পীরা বিক্ষোভ শুরু করেন

লেখক শিল্পীরা বিক্ষোভ শুরু করেন

আজ মার্চের দশম দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতেও পূর্ব পাকিস্তান ছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে পর্যুদস্ত। অফিস-আদালত ছিল বন্ধ। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শামিল বাঙালিদের বিরুদ্ধে এদিন এক ফরমান জারি করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। এতে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকারের কাজকর্মে বাধার সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি কাজে বাধা দিলে বা সামরিক বাহিনীর চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সামরিক বিধিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘোষণায় সামরিক বাহিনীর ১১৪ নম্বর নির্দেশ জারি করে বলা হয়, যদি কেউ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তি বিনাশ অথবা সেনাবাহিনীর চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে তবে তা সামরিক বিধিতে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রেসিডেন্টের ফরমান জারির সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে দেখা দেয় তীব্র প্রতিবাদ। নতুন উদ্যমে মানুষ বেরিয়ে আসে রাজপথে। ফরমান জারির পর কার্যত সবকিছু থেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পাকিস্তানি সরকার। এদিন সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। সচিবালয়, সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, রেলওয়ে, বন্দরসংশ্লিষ্ট সবাই আমাদের নির্দেশ মেনে চলছে। বিশ্ববাসী ও পশ্চিম পাকিস্তানের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মানুষও পাকিস্তান সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেনি। তবুও তারা হটকারী চক্রান্তে উন্মত্ত হয়ে সমরসজ্জা অব্যাহত রেখেছে। রংপুর ও রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন চলছে। এদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ৪০ কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় গুলিতে একজন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। প্রাদেশিক সরকারের রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা। এদিকে, এদিন থেকেই গোপনে পাকিস্তান সরকার সি-১৩০ বিমানে রাতের অন্ধকারে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলায় সেনা আনতে শুরু করে। সমুদ্রপথেও আনা হতে থাকে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব সংবাদ অত্যন্ত গোপনে বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতে থাকেন সিনিয়র বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা। পূর্ব পাকিস্তানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব ভালোভাবে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে। আন্দোলনের তীব্রতা বুঝতে পেরে পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো তাদের সুর পাল্টে ফেলে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে চাপ দিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে। ইংরেজি দৈনিক ‘দি পিপলসে’ এদিন ভুট্টোর কার্যকলাপের কঠোর সমালোচনা করা হয়। নিবন্ধে অতিসত্বর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে শাসনভার বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এদিন বিকালে ওয়ালীপন্থি ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউ মার্কেট এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন। লেখক-শিল্পী-মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে লেখক-শিল্পীরাও এদিন ঢাকাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে তৎকালীন মহাসচিবের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন ছাত্ররা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত