ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারে অস্বস্তি

চাপা ক্ষোভ আওয়ামী লীগের তৃণমূলে

চাপা ক্ষোভ আওয়ামী লীগের তৃণমূলে

দুয়ারে কড়া নাড়ছে রমজান মাস। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১২ মার্চ শুরু হতে পারে রোজা। রমজান মাস শুরুর আগেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আগুনে জ্বলছে জনসাধারণ। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। ইফতারের পণ্যেও স্বস্তি নেই, দাম আকাশছোঁয়া। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে রয়েছে নিম্ন-আয়ের মানুষ। বাজারে অস্বস্তির কারণে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে ক্ষমতাসীন দলের তৃণ্যমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি দেশের প্রতিটি মহলে সমালোচিত হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কেউ কেউ হতাশার সঙ্গে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। অতিরিক্ত মুনাফার স্বার্থে খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যারা দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে বলেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, সরকারকে বেকাদায় ফেলতে একটি মহল চক্রান্ত করছে; সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে জনসাধারণকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। সরকারকে শক্ত হাতে খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে লুটেরাদের দমন করতে হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক তৃণমূল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে তো সরকার অনেক আগে থেকেই কাজ করছে। কিন্তু এত সময় কিন্তু লাগার কথা নয়। আমরা দলের তৃণমূল নেতা, আমাদের অনেকেরই ইনকাম বাড়েনি। দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এদিকে নিত্যপণ্যে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এতদিন কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন থেকে অ্যাকশনে যাচ্ছে প্রশাসন। অবৈধ পণ্য কালোবাজারি-মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতা জনসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখাই এখন সরকারের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া জনসাধারণকে স্বস্তিতে রাখতে দেশজুড়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ভর্তুকিমূল্যে চালসহ টিসিবির পণ্য (ভোজ্য তেল, ডাল, চাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম বিক্রয় শুরু করেছে সরকার। একটি কার্ডধারী পরিবার মাসে সর্বোচ্চ ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ১০০ টাকা ও মসুর ডাল ৬০ টাকা, খেজুর ১৫০ টাকা ও চাল ৩০ টাকায় বিক্রি করছে টিসিবি। এছাড়া রাজধানীর ৩০টি স্থানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ব¡াবধানে প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়ে ২৮ রমজান পর্যন্ত সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করবে সরকার। এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত রাখতে পেরেছি। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য যাতে সহনীয় থাকে, সে লক্ষ্যে আমাদের এই পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রীরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রমজান মাসে মানুষকে জিম্মি করলে কেউ রেহাই পাবে না- বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, রমজান মাসে বাজারদর কম হওয়া উচিত, সবকিছু সুলভ মূল্যে বিক্রি করা উচিত ব্যবসায়ীদের। যারা মানুষকে জিম্মি করে উপার্জনের পথ বেছে নিচ্ছে তাদের আমি একটি সতর্কবাণী দিলাম- বাজার কারসাজি করলে কেউ রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী বাজারদর নিয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষ কষ্টে আছে; এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যেসব মানুষ কষ্টে আছে, তাদের সাথে আমরা সমব্যথী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। রমজান মাসে মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্যসামগ্রী পায়, এজন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও অতি মুনাফা লোভী কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, এটি দেশবিরোধী কাজ। এ কাজ যে করবে, তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। রমজান মাসের বাইরেও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট রমজানে যেন ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে না হয়। আমাদের টার্গেট শুধু রমজান নয়, রমজান মাসের পরও নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো গোষ্ঠীর হাতে যেন সাধারণ মানুষ জিম্মি না থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত