ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দিন

প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দিন

স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় পিছিয়ে আছি- মন্তব্য করে চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডাক্তার সাহেবরা প্র্যাকটিস করে টাকা কামাই করে, কিন্তু গবেষণার দিকে বেশি যায় না। গবেষণায় গুরুত্ব দিলে দেশের মানুষ আরো সুস্থ হবে, সবল হবে, মেধাবীরা আরো মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। গবেষণা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বিষয়ে যারা গবেষণা করবে, তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘কৃষিতে গবেষণা করে আজ আমরা শুধু খাদ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না, বাংলাদেশে এখন আমাদের ফল, ফুল, এমনকি টিউলিপ, যেটা শীতের দেশ ছাড়া হয় না, সেই টিউলিপও বাংলাদেশে হচ্ছে। স্ট্রবেরিও বাংলাদেশে হচ্ছে। সবই গবেষণার ফসল। গবেষণা আমাদের নতুনভাবে দুয়ার খুলে দেয়। আর বাংলাদেশের মাটি হচ্ছে সোনার মাটি, যা লাগানো যায়, সেটাই হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’ চিকিৎসকদের অনুরোধ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরি করছেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিসটা একটু কমিয়ে দিয়ে গবেষণার দিকে মনোযোগ দেন। এছাড়া যারা গবেষণা করবেন, তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য যা প্রয়োজন আমরা করব। গবেষণাটা আমাদের খুব দরকার। বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, এই দুইটার ওপর আমাদের গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের গবেষণায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। গবেষকদের কোনো অসুবিধা থাকলে সেটা কীভাবে দূর করা যায়, সে ব্যাপার আমাদের সরকার সবসময় আন্তরিক।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ গবেষণার জন্য যে টাকা আমরা অনুদান হিসেবে দিচ্ছি, মনে রাখতে হবে এই টাকাটা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণে যেন লাগে। কারণ, গবেষণা থেকে যেটা উদ্ভাবন হবে সেটা কিন্তু জনগণের কাজে লাগবে। সেই কথাটাই মাথায় রাখতে হবে। আমি মনে করি তরুণের যেই মেধাশক্তি সেটা বিকাশের মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথমটির কাজ চলছে। আমরা চেয়েছিলাম দক্ষিণবঙ্গে দ্বিতীয়টি করতে। কিন্তু সেখানকার মাটি অনেক নরম। সে কারণে পাবনাতেই করার পরিকল্পনা চলছে। প্রথমটির সঙ্গে এটার কাজও যাতে শুরু করতে পারি, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ শাসকদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। বিএনপির আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে, বিদেশি খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমান সরকার তা পাল্টে দিয়েছে। গবেষণায় জোর দিয়েছিলাম বলেই, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করার ব্যবস্থাও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক-বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক ৫৪ জন গবেষকের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের সব বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার স্থাপন করছি। প্রথমে ঢাকায় করেছি। নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া সরকারে এসেই দুটি মামলা দিয়েছিল। তখন আমি বলেছি, ভালো করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা একনেকে যারা বসতাম সবাইকে একসঙ্গে মামলার আসামি করে। প্রায় এক ডজন মামলা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে দিয়েছিল আরো ছয়টি। আমি বলেছি, সবগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের যা প্রয়োজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সবই করে দিয়ে গিয়েছিলেন। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের মধ্যে ক্ষমতা দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই সেই পদক্ষেপ নিলেন, তখন এলো চরম আঘাত ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়।’

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, একটা রিজার্ভ মানি নেই, কারেন্সি নোট নেই, যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো খেতে ফসল হয়নি, যা কিছু ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সারা দেশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়কার করে দেয়। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ছিল গৃহহারা, আর ১ কোটি মানুষ ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ধরনের অবস্থায় শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় স্কুল, কলেজের সবগুলোর অবকাঠামো তৈরি করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় বই দেওয়া, ছেলেমেয়ে, শিক্ষকরা যাতে পোশাক পরতে পারেন, সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত