ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাগতম পবিত্র মাস রমজান

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
স্বাগতম পবিত্র মাস রমজান

আজ থেকে শুরু হলো পবিত্র রমজান মাস। এ মাস মানবের জন্য আল্লাহ পাকের খাস রহমত, মানব জাতির জন্য মহা নেয়ামত। দূর পাড়াগাঁয়ের এমন একটি জনপদের কথা চিন্তা করতে পারি যেখানকার লোকেরা দীর্ঘকাল থেকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যুৎ বা গ্যাস সরবরাহ থেকে বঞ্চিত। সেখানে হঠাৎ একদিন বিদ্যুতের বাতি জ্বলে উঠলে জনপদের প্রতিটি মানুষ কী পরিমান আনন্দিত হবে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অথবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদ যেখানে শিক্ষা ও সভ্যতার আলো পৌঁছায়নি, স্কুল মাদ্রাসা বা মানব উন্নয়নের কোনো প্রতিষ্ঠান নাই সেখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে জনপদের সচেতন লোকেরা কতখানি আনন্দিত হবে সে গল্প বলে শেষ করা যাবে না। পবিত্র মাহে রমজান হলো মানব জাতির জন্য সে ধরনের এক মহা আয়োজন। ধর্মীয় পরিভাষায় আল্লাহর নেয়ামত, অন্ধকার জনপদে আসমান হতে নূরের ঝলকানি, রহমতের বরিষণ ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষায়তন। রমজানের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে মুসলিম সমাজে পবিত্রতার আলোর ঝলকানি শুরু হয়ে যায়, চলতে থাকে দীর্ঘ এক মাসকাল। রোজাদার সারাদিন উপবাস থাকে, সর্বক্ষণ নিজেকে মহান আল্লাহর সামনে হাজির হিসেবে অনুভব করে। ফলে প্রচণ্ড ক্ষুধা-তেষ্টা কিংবা স্বামী-স্ত্রী কাছে থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলা খানাপিনা যৌন কামনা থেকে বিরত থাকে। নিজেকে আল্লাহর আদেশ পালনে তৎপর হিসেবে উপলব্ধি করে। এভাবে যাবতীয় অন্যায় অসুন্দরকে বর্জন ও সৎ সুন্দর চরিত্রে সজ্জিত হওয়ার সাধনা করে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তি ভালো মানুষ ও নৈতিক চরিত্রে উন্নত হওয়ার চেতনায় উজ্জীবিত হয়। এই চেতনা যখন সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তখন অমাবস্যার রাতে অন্ধকার জনপদে বিদ্যুৎ সংযোগ ও আলোর ঝলকানির মতো কোলাহল দেখা দেয়। যার চূড়ান্ত প্রদর্শনী হয় ঈদগাহে। গ্রীষ্মের তাপদাহে উষর প্রকৃতিতে বর্ষার বরিষণ যেভাবে প্রাণের শিহরণ আনে কিংবা শীতের তোশকে ঘুমিয়ে পড়া প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়ায় যেভাবে জীবনের জয়গান শুরু হয় রমজানেও আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চেতনার মুষলধারে বরিষণ কিংবা ঈমানের বসন্তে সবুজের মহাসমারোহ শুরু হয়ে যায়।

মানুষ যখন মানবীয় গুণাবলী হারিয়ে লোভ লালসা, ভোগ বিলাসিতায় মত্ত হয় তখন তার মানবীয় সত্তা বা রুহানি শক্তির অপমৃত্যু ঘটে। তখন মানুষ হয়ে যায় সাধারণ জীব জানোয়ারের মতো আরেকটি পশু। তার স্বভাবে প্রভাবশালী হয় হিংসা, বিদ্বেষ, ‘যত পাই তত খাই’ ধরনের স্বভাব বা পশুত্ব। মানব জাতিকে এই পশুস্বভাব থেকে মুক্তিদানের অনুশীলন হয় রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায়। বস্তুত মানুষকে পশুত্ব থেকে মুক্তিদান, মানবীয় গুণাবলীতে সজ্জিত করা, সোনার মানুষ, আদর্শ নাগরিক, সৎ সুন্দর প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে তোলার মহা আয়োজন সর্বজনীন ও শিক্ষায়তন মাহে রমজান। কুরআন মজীদে রমজান মাসের এই বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগেকার লোকদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

তাকওয়া কি? তাকওয়া মানে সতর্ক জীবন। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় সতর্কতার জীবন যাপনই হলো তাকওয়ার জীবন। পশু স্বভাব থেকে মুক্ত হয়ে মানবীয় গুণাবলীতে সজ্জিত হওয়ার নাম তাকওয়া। এই তাকওয়া কেবল মুখের কথায় অর্জন হওয়ার জিনিস নয়। এর জন্য সাধনা করতে হয়। রমজানের রোজা হচ্ছে সেই সাধনা। এই সাধনা ও অনুশীলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরনো। আগেকার যুগের উম্মতদের উপরও আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষতার জন্য রোজা ফরজ ছিল। তাতে বোঝা যায়, মানবীয় গুণাবলীতে সজ্জিত হওয়া ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য রোজা এক শাশ্বত বিধান। মানব সভ্যতার শুরু থেকে এর অনুশীলন চলে আসছে। রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমত এখানেই নিহিত। আসুন আমরা এই আয়োজন, নৈতিক প্রশিক্ষণ, আত্মশুদ্ধির সর্বজনীন অনুশীলনে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহর রহমতের সাগরে অবগাহন করি।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত