ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান। গতকাল চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার মোলহেডে এ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এরপর জাটকা সংরক্ষণের সচেতনতা বাড়াতে নৌ র‌্যালি করা হয়। আব্দুর রহমান বলেন, দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। অথচ অবৈধভাবে জাটকা আহরণের নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করে থাকে। জাটকা ধরার সাথে জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন জাটকা ধরলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকাসহ রেণুপোনা ধরে, তারা এই সমাজ ও দেশের শত্রু। দেশের মৎস্য সম্পদের যারা শত্রু তাদের ব্যাপারে কোনো তদবির শোনা হবে না এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।

জাটকা সংরক্ষণে কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বসাধারণকে বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলিশসহ সকল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সাথে জড়িত মৎস্য চাষি, জেলে/মৎস্যজীবী জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১.৯৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ ভাগ ইলিশ থেকে আসে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল রহমান বলেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও এ সম্পদের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, জনবান্ধব এ সরকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তরসহ মাঠ প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি ‘ জাটকা সংরক্ষণ অভিযান’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজনীয় লোকবল, নৌযানসহ প্রয়োজনীয় রশদের স্বল্পতা এবং অভিযানে নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন করছেন। ভূমিহীন-গৃহহীন মৎস্যজীবীদের তালিকা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীদের মধ্যে যাদের ভূমি নেই, গৃহ নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি ও গৃহ প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে দেশের রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য।

তিনি বলেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধিনেই সম্ভব। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে অনেক নিন্দুক ও তাদের প্রভুরা বলেছিল- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের মুখে ছাই দিয়ে শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছেন, কেবল তার অধিনেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনার উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করেছিল। হিংসা থেকেই নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে দেশের লাখ-লাখ মানুষের সমর্থন থাকায় তিনি মড়লদের উপেক্ষা করেছেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, চাঁদপুরে প্রায় ৪৩ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছে। তাদেরকে যে সহযোগিতা দেয়া হয়, তার উপযোগিতা বিবেচনা করা প্রয়োজন। নৌ পুলিশের কিছু কিছু সদস্য জেলেদের হয়রানী করে। আবার সব জেলেও ১৬ আনা সঠিক না। তারাও অনেকে আইন মানে না। গত ১১ দিনে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের তো আর বাড়ি থেকে ধরে আনেনি। নদী থেকেই ধরেছে। বেআইনি জাল ব্যবহার করার জন্য আমার জেলে ভাইদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমি জানতে চাই, এই জাল যারা উৎপাদন করে, তাদের কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? জেলেপল্লিতে অভিযান হয়, আমি জানতে চাই, যেখানে জাল উৎপাদন হয়, সেখানে কবে অভিযান করা হয়েছে? যদি বেআইনি জাল উৎপাদনই না হয়, তাহলে ব্যবহারও হবে না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোহাং সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর, চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, স্থানীয় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত