ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কাজ ফাঁকি দিলে দেখিয়ে দেবে ডি-নথি

কাজ ফাঁকি দিলে দেখিয়ে দেবে ডি-নথি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও হলগুলোর অফিসিয়াল কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বেশ পুরোনো। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। এবার এই দীর্ঘসূত্রতা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুধু দীর্ঘসূত্রতা নয়, শিক্ষার্থীদের দেয়া সেবার মান বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নথি (ডি-নথি) ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

প্রশাসনিক ভবন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ডি-নথি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কোনো কার্যক্রম হার্ড কপির জায়গায় অনলাইন কপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে অফিসিয়াল কার্যক্রম খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন কিংবা হলের কোনো কর্মকর্তার ওপর অর্পিত কোনো সেবা ঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে কি না, কিংবা কোনো দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। কোন কর্মকর্তা কতদিন ধর তার ফাইল আটকে রেখেছেন, তা খুব সহজেই দেখিয়ে দেবে ডিজিটাল নথি। এমনকি কোন কর্মকর্তা কোন সময়ে তার ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন, সেটাও ডি-নথির তথ্যে দৃশ্যমান হবে। এতে করে দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তা যদি কাজে ফাঁকি দেন, তা খুব সহজেই কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করতে পারবে। যে কাজ সম্পন্ন হতে আগে এক সপ্তাহ সময় লেগে যেত, তা ডি-নথি পদ্ধতির মাধ্যমে ১ ঘণ্টায় করা সম্ভব হবে বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা সংস্থা এটুআই’র নথি টিমের প্রোগ্রাম সহকারী সজিবুর রহমান। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই পদ্ধতির মাধ্যমে সবদিক দিয়েই লাভ হবে। সময় ও অর্থ কম লাগবে। এর পাশাপাশি কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা আসবে। যেই কাজ করতে আগে এক সপ্তাহ লাগত তা ১ ঘণ্টায় করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হার্ড কপিতে কোন কর্মকর্তা কখন স্বাক্ষর করলেন, দেরি করলেন কিনা, এখন তা বোঝা যায় না। কিন্তু ডি-নথির মাধ্যমে ফাইল কার কাছে আছে, সেটা দেখা যাবে। কেউ চাইলেই তখন মিথ্যা কথা বলতে পারবেন না। এখানে সবসময় রিয়েল টাইম দেখাবে। কেউ যদি রাত ১২টায় ফাইলে স্বাক্ষর করে সেটাও এর মাধ্যমে দেখা যাবে।’

এই নথির কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে নথি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শামীম পারভেজ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী যখন তার বিভাগে আবেদন করবেন, তখন বিভাগ সেই আবেদনের হার্ড কপি প্রসেস করে অনুষদের ডিন হয়ে এখন যেভাবে আমাদের কাছে পাঠায়, তখন তারা এই হার্ড কপি না পাঠিয়ে ফাইলটি স্ক্যান করে তার সাথে একটি নোট লিখে সেটা ডিনকে পাঠাবে। ডিন সেখানে তার মতামত দিয়ে সেটা (ফাইল) রেজিস্ট্রারকে ফরোয়ার্ড করবেন। রেজিস্ট্রার থেকে স্বাক্ষর করা ফাইল যেভাবে ফরোয়ার্ড হয়, ঠিক সেভাবে এখানে সফট কপিটা ফরোয়ার্ড হবে।’

‘এটা ফরোয়ার্ড হওয়ার সাথে সাথে ওই শিক্ষার্থীর বিভাগে একটি ট্র্যাকিং নাম্বার চলে যাবে। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী যদি ১০ দিন পরও এসে তার আবেদনের অবস্থা দেখতে চান, তাহলে ট্র্যাকিং নাম্বারে ঢুকলেই ওই ফাইলের বিস্তারিত জানা যাবে অর্থাৎ ফাইলটি কোথায় আছে, কোন টেবিলে আছে এবং কী অবস্থায় আছে, সব দেখতে পারবেন’- বলেন তিনি।

শামীম জানান, এরই মধ্যে নথির প্রায় সব কাজ শেষের দিকে। আগামী এপ্রিলে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

নতুন এই ব্যবস্থার আওতায় অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে আসলে, তা প্রশাসনিক ভবন ও হলগুলোর কর্মকর্তাদের কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আসবে। এতে করে একদিকে যেমন কাজের গতি বাড়বে ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এলে সকল সংকট কেটে যাবে। অনেক কর্মকর্তা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন না, আবার আগেই বের হয়ে যান। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। এবার আশা করি এই পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ হলে সকল কাজে গতি আসবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান মনে করেন এই নথির বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। একে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নথি চালু করা বর্তমান প্রশাসনের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মাননীয় উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ ধরনের নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উপাচার্যের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

ই-নথির প্রচলনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাজের গতি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে, গুণগতমান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সহজেই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং ভোগান্তি লাঘব হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিজিটাল নথির প্রচলন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অধ্যাপক শাহীন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ডি-নথির মাধ্যমে সেবা প্রদানে গতি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারব। এর মাধ্যমে কোন ফাইল কখন, কোথায় অবস্থান করছে, কেউ সিদ্ধান্ত দিতে বিলম্ব করছে কি না বা অযথা কোনো গাফিলতি করছে কি না, সেই বিষয়গুলোকে মনিটর করা সম্ভব হবে। ডি-নথির মাধ্যমে শুধু সেবা দেয়া নয়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও কাজের গতিশীলতা আসবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা এই নথি প্রয়োগ করবে তারা এর ব্যবহার জানতে পারবে, কীভাবে কম্পিউটার অপারেশন করতে হয় সেটাও অবহিত হবে। এতে করে সকলের মধ্যে আস্থা ও শক্তি ফিরে আসবে।’

‘ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির প্রয়োগে দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এর মাধ্যমে (ডি-নথি) আমাদের যে দায়বদ্ধতা সেখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-নথির প্রয়োগের মধ্যদিয়ে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা এখনো ডি-নথির ব্যবহার করে নাই তারা এর ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ খুঁজে পাবে। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরাও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকব’- যোগ করেন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত