ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন চরিত্রে জাতীয় পার্টি

নতুন চরিত্রে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রকাশ্যে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একদিকে জিএম কাদের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে এমপিদের নিয়ে একটি অংশ কাজ করছেন, অন্যদিকে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের বাহিরের নেতারা জোট করেছেন। দুটি অংশ নিজেদের শক্তি দেখিয়ে আসল জাপা বলে পরিচয় দিচ্ছে। দেবর-ভাবি লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে আলাদা করে দলীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় পদ বন্টন করার পথে হাটছে দুটি অংশ। জাতীয় সংসদের ভেতরে শক্তি দেখাচ্ছেন জি এম কাদের। আর সংসদের বাহিরে দলের ভিতরে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রওশন এরশাদ।

জানা যায়, দলের প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বের মধ্যে রওশন এরশাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেছেন। এ কমিটি গঠনের পর অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে শফিকুল ইসলাম সেন্টু পদত্যাগ করেছেন। তবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি পার্টির চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এক জরুরি বৈঠকে সেন্টুর পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ না করে তাকে দলীয় কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।

জাপা সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে সংকট তৈরি হয়েছে। ভেঙেছেও বেশ কয়েকবার। এখন নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অংশের নামে চারটি দল নিবন্ধিত রয়েছে। ২০১৯ সালের এরশাদের মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টি বার বার ভাঙলেও লাঙ্গলের নিয়ন্ত্রণ ছিল এরশাদের হাতেই। তবে এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদের ও রওশনপন্থীদের মধ্যে টানাপড়েন চলছেই। জিএম কাদেরের হাতে দলীয় নেতৃত্ব থাকলেও গত চার বছরে বেশ কিছু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ। কিন্তু তা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় সেসব মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর রওশনপন্থিরা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশনে। পরে নির্বাচন কমিশন তাদের চিঠি দিয়ে জানায়, তাদের অপসারণ প্রক্রিয়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় ওই আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি প্রথমবার ভাঙে ১৯৯০ এরশাদ সরকারের পতনের আগেই। তখন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা টের পেয়ে জাতীয় পার্টির প্রথম মহাসচিব ডা. এম এ মতিন-সহ বেশ কয়েকজন দল থেকে বেরিয়ে যান। যদিও তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (প্রতীক কাঁঠাল) গঠিত হয় অনেক পরে। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি প্রথম ভাঙনের মুখে পড়ে ১৯৯৬ সালে। তখন এরশাদ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দিলে তৎকালীন মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি থেকে সরে গিয়ে নতুন দল গঠন করেন। সেই দলের নাম হয় জাতীয় পার্টি-জেপি।

এরপর ১৯৯৯ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টি চারদলীয় জোট ছেড়ে দিলে তখনকার মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু এরশাদের জাতীয় পার্টি ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন। তার দলের নাম হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে

সাবেক মহাসচিব কাজী জাফর আহমেদ আলাদা দল গঠন করে বিএনপি জোটে থেকে যান। এই দলটির নাম হয় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। নতুন করে দলের ঘোষণা দেওয়ার পর রওশন অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, জিএম কাদের ও চুন্নু সাহেব জাতীয় পার্টিকে চরমভাবে ধ্বংস করেছে। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন এই সম্মেলনের মাধ্যমে। তবে এই সম্মেলনে জাতীয় পার্টির ১১ জন সংসদ সদস্যের কেউ অংশ নেননি। ছিলেন না সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা-সহ জিএম কাদেরপন্থি নেতাদেরও কেউ। জিএম কাদের অংশের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই সম্মেলনে যারা গেছেন তারা সবাই দল থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যহতিপ্রাপ্ত। সক্রিয়ভাবে যারা জাতীয় পার্টি করে তাদের কেউ যায়নি।

রওশন এরশাদ বলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর লাঙ্গল প্রতীক ধরে রাখতে আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। সুপ্রিমকোর্ট সেই সময় এরশাদ ও আমাকে লাঙ্গল প্রতীক দিয়েছিলেন। এখনো লাঙ্গল জাতীয় পার্টির আছে, আগামীতেও থাকবে। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের অংশ বলেছে, দলের মূল অংশ হিসেবে তারাই নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। সেসব তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভান্ডারে আছে। তাদের বক্তব্য, চাইলেই কেউ নির্বাচন কশিনের নিয়ম ভাঙতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দলীয় প্রতীক বরাদ্দ কিংবা যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে গঠনতন্ত্রে যে কয়জন প্রেসিডিয়াম মেম্বারের সাপোর্ট লাগে সেই অনুযায়ী যদি রওশনপন্থিরা তথ্য জমা দেন তাহলে নির্বাচন কমিশন তার আইন অনুযায়ী বিবেচনা করবে।

এদিকে দশম জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আগামী ১২ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন। বনানী চেয়ারম্যান কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের এক যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। আগামী ৩০ এপ্রিল ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নিজ নিজ জেলায় বর্ধিত সভা করা হবে। এছাড়া ওই সভায় আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন (উপজেলাসহ সব পর্যায়ে) দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানানো হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত