ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আল্লাহর নাম নিয়ে জিকিরের প্রতিদান

আল্লাহর নাম নিয়ে জিকিরের প্রতিদান

আগেকার দিনে মরুবিয়াবানের বাহন ছিল উট। উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। দূরের এক মুসাফির মরুভূমির বুক চিরে কোথাও যা”িছল উটের বাহনে চড়ে। হঠাৎ দেখে এক লোক বসে আছে বালুচরে। দেখে এ তো আর কেউ নয়, মজনুন। লাইলির পাগল। কাছে গিয়ে দেখে মজনু মনের মাধুরি মিশিয়ে কি যেন লিখছে। হাতের আঙ্গুলকে কলম বানিয়ে লিখে যা”েছ বালুকার কাগজের উপর, চোখের পানি তার কালি। মুসাফির মজনুকে জিজ্ঞাসা করে, মজনু! কী লিখছ। জবাব দেয় চিঠি লিখছি। কার কাছে। লাইলার কাছে। জান না, বালির উপরের লেখা এই আছে এই নাই। একটুখানি বাতাস বইলে নিমিষে মুছে যাবে। পন্ড হবে তোমার সব পরিশ্রম। একটু পরেই কোনো চিহ্ণ থাকবে না। তুমি ছাড়া কেউ পড়বে না। এই চিঠি লাইলার কাছে কীভাবে যাবে।

মজনুন জবাব দেয়, আমি জীবনভর লাইলার প্রেমে আত্মহারা। অথচ লাইলার দেখা পাইনি। লাইলার কিছুই আমার কাছে নাই, তার নামটা ছাড়া। তার জন্য আমার প্রাণ উতালা। তাই তার নাম জপে মনে সান্ত¦না খুঁজি। এই চিঠি লাইলার কাছে যাবে না জানি। আমার মনকে প্রবোধ দেয়ার জন্য আমি তার নাম আঁকি। তাকে দেখিনি, তার প্রেমের পরশ পাই নি, তার নামটাই শুধু জানি, তাই তার নাম নিয়েই প্রেমের কবিতা লিখি।

ফারসি সাহিত্যের মহাকবি আবদুর রহমান জামি ‘হাফত আওরঙ্গ’ মহাকাব্যে মজনুর প্রেমের এই আলেখ্য রচনা করে বুঝিয়েছেন, বান্দা আল্লাহকে দেখে নি। আল্লাহর পরিচয় বলতে আল্লাহ নামটাই সে জানে। তাই প্রেমে মত্ত বান্দা আল্লাহর নামের মাঝে সান্ত¦না খোঁজে। আল্লাহর নামের জিকিরেই আছে দুনিয়ার শান্তি। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, ‘জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ পরম প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রাআদ, আয়াত-২৮)।

বিশ বছর আগের ঘটনা। ইরানের মাশহাদের ফেরদৌসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসেছিলেন বাংলাদেশে একটি শিক্ষা সাংস্কৃতিক দল নিয়ে। খুলনা কুষ্টিয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সফর শেষে ঢাকার পথে যশোর বিমান বন্দরে অপেক্ষা। ফারসি সাহিত্যের ইরানী বাংলাদেশী বিদগ্ধজন তাকে ঘিরে আছে। তিনি একটি প্রশ্ন রাখলেন সবার কাছে। মনে হল, পরীক্ষা নি”েছন। বললেন, ফেরদৌসির মহাকাব্য শাহনামার প্রথম শ্লোকটি বলেন, কয়েকজন সাথে সাথে বলে ফেললেন। ‘বেনামে খোদাওয়ান্দে জান ও খেরাদ, কেযীন বরতর আন্দীশা বর নাগযারাদ’। প্রাণ ও জ্ঞানের মালিক যিনি তার নামে শুরু করছি/ একে অতিক্রম করে চিন্তা হয় না আর অগ্রগামী।” ড. বাকেরির জিজ্ঞাসা ছিল শ্লোকের দ্বিতীয় চরণের মর্মার্থ কী। মহাকবি কী বুঝাতে চেয়েছেন, কেযীন বরতর আন্দীশা বর নাগযারাদ’- একে অতিক্রম করে চিন্তা হয় না আর অগ্রগামী। মুহূর্তে পিনপতন নিরবতা। সবচেয়ে নবীন একজন যে নিজেকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের আজীবন ছাত্র মনে করে কিছুক্ষণের নিরবতা ভঙ্গ করে ইরানী প্রফেসরকে জানাল, কবি বলতে চেয়েছেন, যে নাম নিয়ে ফেরদৌসী তার মহাকাব্য শুরু করছেন, তার পরিচয় সম্পর্কে এটুকুই তিনি জানেন যে, তিনি হলেন প্রাণ ও জ্ঞানের অধিপতি। কবি আল্লাহর এটুকু পরিচয়ই জানে, আর বেশিকিছু জানে না। তার চিন্তার শেষ গন্তব্য আল্লাহর নাম। এই নামকে সম্বল করেই তিনি এগিয়ে যেতে চান। সত্যিই মনে এখনও প্রশান্তি অনুভব করি, যখন ড. বাকেরির সেদিনের সš‘ষ্টি, প্রশংসা ও দোয়ার কথা স্মরণ করি।

আধ্যাত্মিক সাধনার মূল কথা তাই আল্লাহ নামের জপনা। শয়নে জাগরণে সদা তার নামে সিক্ত রাখা চাই রসনা। আল্লাহর এমনও বান্দা আছেন চলতে ফিরতে আল্লাহ নামের জপমালা যাদের নিত্যসঙ্গী। রমজানে এর অনুশীলন আমরা করতে পারি কাজেকর্মে শত ব্যস্ততার মাঝেও। এই জপনা এই তসবীহর সওয়াব কতটুকু ধারণা করতে পারি হাদিসের ভাষ্য থেকে। আল্লাহর নবী বলেন- “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (হাশরের ময়দানে পাপপুণ্যের ওজন যখন দেয়া হবে তখন) আলহামদু লিল্লাহ মীযান পাল্লাকে ভরে দেবে। আর সুবহানাল্লাহ ও আলহামদু লিল্লাহ বলার সওয়াব আসমান ও জমিন পূর্ণ হয়ে যায়। আর নামায হল জ্যোতি।” (বুখারি ও মুসলিম)।

এক সহকর্মী জিজ্ঞাসা করল, স্যার একবার আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ বললে এই পৃথিবী বা আসমানসমূহ কিংবা নেকি বদি ওজন দেয়ার মীযানপাল্লা ভরে যাওয়ার মতো সওয়াব হবে- বিষয়টা তো বুঝে আসল না। বললাম, যে কম্পিউটারে কাজ করছ, তার মনিটরে কয়েকটি আইকন আছে। একেকটি আইকনে যখন ক্লিক কর, একেকটি দুনিয়া তোমার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে যায়। দাবি করতে পার যে, কম্পিউটারের স্ক্রীনে সমগ্র দুনিয়া তোমার সামনে হাজির। অথচ তোমার শ্রম হল মাউসে যৎসামান্য ক্লিক। আল্লাহর নামের যিকিরের মাহাত্ম্য তুমি আপাতত এই উদাহরণ দিয়ে বুঝ। যারা আল্লাহর নাম ভুলে থাকে। চিন্তার জগতে উ™£ান্ত ঘুরে তারা কত লোকসান বয়ে যা”েছ তা কি চিন্তা করতে পার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত