জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

জাহাজের দায়িত্বে ১৫-২০ জনের নতুন সশস্ত্র দল

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

সম্প্রতি সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিকদের নিয়ে যাত্রা করা জাহাজটি সোমালিয়ান কোস্ট হতে ৭ মাইল দূরে নোঙর করেছে। মোজাম্বিক থেকে আবুধাবি যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটি নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। সূত্র জানায়, সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৫-২০ জনের নতুন দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। সাথে আছে ইংরেজি জানা একজন ইন্টারপ্রিটারও। জলদস্যুদের মূল ভাষা সোমালি আর আরবি। এদিকে, জাহাজের চিফ কুক আরেকজনকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫০ জনের জন্য ২-৩ বেলা রান্না করছে। নাবিকরা কম করে খেলেও জলদস্যুরা ভরপেট খাচ্ছে। ফলে, খাবার সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান জানান, জাহাজের নাবিকরাই সব দায়িত্ব পালন করেছে, জলদস্যুরা শুধু অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে। জাহাজের নাবিকরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ্য রয়েছেন। সাহরি ও ইফতার করছে। ব্রিজে জামাতে নামাজ আদায় করছে। কয়েকদিন সবাই ব্রিজে থাকলেও সবাইকে দিনের বেলা কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে রাতে সম্ভবত আবার ব্রিজেই ফিরতে হবে। এতে জাহাজের খাবার আর পানির ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাবার ২৫ দিন যাবে বলা হলেও হয়তো ১১-১২ দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। ২০০ টন পানি শেষ হয়ে গেলে রেশনিং বা ব্যয় সংকোচন শুরু হবে। জলদস্যুরা কি মানের খাবার বা পানি দিবে সেটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন তবে শিপের মতো মানসম্পন্ন অবশ্যই হবে না। খাবারের পরিমাণ কমিয়েও দিতে পারে। তিনি আরও জানান, জলদস্যুদের মূল চাহিদা মুক্তিপণ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসাবে কোনো নির্দিষ্ট অংক দাবি করেনি। এই মুক্তিপণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওরা জাহাজটা ছাড়বে না। এই মুক্তিপণের পরিমাণ হতে পারে ৫-১০ মিলিয়ন ডলার। দর কষাকষির পর একটা নির্দিষ্ট মুক্তিপণ ওরা বুঝে পেলে জাহাজসহ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে। ওরা শারীরিকভাবে সুস্থ্য থাকলেও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আশাকরি এই সমস্যার দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে। জাহাজে থাকা নাবিকরা হলেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ। এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম দজাহান মণিদ। ৪০ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী। প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৪ মার্চ দুপুরের দিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছায় জাহাজটি।