ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মে মাসে চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই ইসির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই ইসির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার পর এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ মার্চ স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এসব নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ছিল না। আগামী মে মাসে সারা দেশে চার ধাপে উপজেলা পরিষদ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে ভোটে উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন ও দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ বিভিন্ন করণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে সর্বশেষ পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

গত ১১ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে সাধারণ ও কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের ২৩১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ময়মনসিংহের ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সিটিতে ভোট প্রদানের হার ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। তার আগে ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইকরামুল হক টিটু মেয়র নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে কুমিল্লা সিটিতে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৯৪ হাজার ১১৫ জন। ভোটের হার ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালের কুমিল্লায় ভোট পড়েছিল ৫৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

সংসদ নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচনে ৬১ দশমিক ১ শতাংশ, ১৯৮৮ চতুর্থ জাতীয় নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (একতরফা) ২১ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে ৭৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনে ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২০১৪ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়ে। সরকারবিরোধীদের বর্জনের মুখে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরো কম হয়।

সূত্র জানায়, আগামী ৪ মে থেকে চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল রাশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ তপশিল। সংসদ নির্বাচনের কেনাকাটার সময় একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে রেখেছে কমিশন। প্রস্তুত রয়েছে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাগজও। তবে এবার কতগুলো উপজেলায় ইভিএম আর কতগুলোতে ব্যালটে ভোট হবেতা এখনো ঠিক হয়নি।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, এরই মধ্যে কমিশন চার ধাপে উপজেলা নির্বাচনের তালিকা প্রকাশ করেছে। উপজেলা নির্বাচনের বিস্তারিত সূচি শিগগির ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ও তপশিলের মাঝে ৪০ থেকে ৪২ দিন সময় রাখা হয়। সেটা পরবর্তী কমিশন সভায় নির্ধারণ করা হবে।

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৪ মে প্রথম ধাপে ১৫৩টি, ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, ১৮ মে তৃতীয় ধাপে ১১১টি ও চতুর্থ ধাপে ২৫ মে ৫২টিসহ মোট ৪৮১টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। রমজান এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনায় রেখেই এসব তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ২৬ উপজেলা কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রথম ব্যাচের এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় এরই মধ্যে ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ নির্বাচনে যাতে অধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনি পোস্টার, নির্বাচনি প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারের সমর্থন তুলে দেওয়াসহ ইসির সংশোধিত প্রস্তাবে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় সায় দিয়েছে। এখন অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হলেই বিষয়টি কার্যকর হবে।

ইসি সূত্র জানায়, দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় জুন মাসে। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন থেকে। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, নিবার্চনের ভোটারদের উপস্থিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর না। এই দায়িত্ব হলো যারা নির্বাচন করবেন, প্রার্থী, দল, তাদের সমর্থক বা নেতাকর্মীদের। ভোটারদের যদি কোথাও ভয়ভীতি দেখানো হয় বা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে, তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা হস্তক্ষেপ করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত