বাংলাদেশি ২৩ নাবিক অপহরণ

ধরাছোঁয়ার বাইরে সোমালীয় জলদস্যু

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ অপহরণের চার দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, জাহাজটি সোমালিয়ার গারাকাড উপকূলে পৌঁছার ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে গত শুক্রবার (১৫ মার্চ)। তবে এখন পর্যন্ত ওই জাহাজে জিম্মি ২৩ নাবিককে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। জলদস্যুদের পক্ষ থেকেও মালিক পক্ষের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে অনুযায়ী জানা যায়, সোমালিয়ার উপকূলে জাহাজের বর্তমান অবস্থান থেকে নোঙর তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে জলদস্যুরা। এরপর জাহাজটি জলদস্যুদের কথামতো আবার চলতে শুরু করে। নাবিকদের ধারণা, জলদস্যুরা তাদের জন্য আরও নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চায় জাহাজটি। জাহাজটির মালিক কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম জানান, জিম্মি নাবিকদের কথা বলার সুযোগ অব্যাহত রেখেছে জলদস্যুরা। নাবিকরা আমাদের জানিয়েছেন তারা নামাজ, রোজা, সাহরি, ইফতার করতে পারছেন। তাদের সঙ্গে জলদস্যুরাও খাবার খাচ্ছে। এতে করে খুব দ্রুত খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের সামনে জলদস্যুরা বড় বড় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অবস্থান করায় মানসিক চাপে আছেন নাবিকরা। যদিও জলদস্যুরা নাবিকদের আঘাত কিংবা কোন দুর্ব্যবহার করেনি। আমাদের পক্ষ থেকে নাবিকদের জানানো হয়েছে, তাদের ছাড়িয়ে নিতে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এর আগেও আমাদের একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের বর্তমান অবস্থান থেকে নোঙর তুলে ফেলা হয়েছে। জাহাজটিকে আবার চলতে শুরু করেছে। হয়তো তাদের পছন্দের নিরাপদ কোনো সমুদ্র উপকূলে নিয়ে যেতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করছে। এদিকে নাবিকদের পরিবারে দুশ্চিন্তা না কাটলেও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে বলে জানা গেছে। সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল (২৪) মীরসরাইয়ের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার শাকিলের সাথে বড় ভাই আবু বক্করের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। আবু বক্কর জানান, আমার ভাই গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাতে মোবাইল ফোনে কল দেয়। আমাদের চিন্তা করতে নিষেধ করে। জানায় দস্যুরা তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। শারীরিকভাবে সবাই ভালো আছে। তবে খাবারের সংকট দেখা দিতে পারে, এটা জানায়।

সংবাদে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সকলের দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছেন মন্ত্রী। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ ও নাবিকদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, নাবিকদের এবং জাহাজটাকে মুক্ত করে আনা। এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে। আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা আছে। আমরা আশা করছি, সুস্থভাবে নাবিকদের এবং জাহাজটাকে দ্রুত মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব। জিম্মিকাণ্ডে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনে কি প্রচারিত হচ্ছে বা এখানে কি হচ্ছে, যারা হাইজ্যাক করেছে তারা; কিন্তু সবই দেখছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল দেখার সুযোগ আছে। এছাড়া এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ। সুতরাং এ বিষয়টাকে যখন অতিগুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন বার বার দেখানো হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটা নিগেটিভ ইম্প্যাক্ট হচ্ছে। হাইজ্যাকারদের অবস্থান অনমনীয় হচ্ছে। আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করি, তাহলে পরিস্থিতি উত্তরণ সহজ হবে। অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১০০ দিনের মাথায় একই কোম্পানির জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটি ২৩ নাবিকসহ দখলে নেয়। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। চট্টগ্রামের কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজটিকে এখন সোমালিয়া উপকূলের গদবজিরান শহর থেকে প্রায় চার মাইল দূরে নোঙ্গর করে রেখেছ জলদস্যুরা।